পোশাকের অপরিহার্য উপাদান ডিজাইন। নিখুঁত আর নান্দনিক ডিজাইনের উপর নির্ভর করে পোশাকের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে বিশ্ববাজারে।
নারায়ণগঞ্জের ফকির ফ্যাশন গার্মেন্টস কারখানাটির সিনিয়র ডিজাইনার কামরুল হাসানের উদ্ভাবনে চলে নতুন নতুন পোশাকের স্যাম্পল তৈরির কাজ। যার গন্তব্য ইউরোপের বাজার, যেখানে নিটওয়্যার পণ্যের চাহিদা এখন শীর্ষে।
গেস ব্র্যান্ডের প্রস্তাবিত এ ডিজাইনকে আরও দৃষ্টিনন্দন করার প্রয়াস কর্মীদের। তবে পোশাকের গ্রহণযোগ্যতা কি শুধু ডিজাইনের উপর নির্ভর করে?
কামরুল হাসান বলেন, আমরা যারা পোশাক তৈরি করছি তাদের আসলে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও রিটেইলার সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা থাকা উচিত। একটা সময় ছিল ক্রেতারা শুধু অর্ডার করতো আর আমরা ডেলিভারি করে দিতাম। কিন্তু আমরা চাচ্ছি কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় তাদেরকে অফার করতে।
সম্প্রতি দেশের তৈরি পোশাক খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে নিটওয়্যার পোশাক। যা গেল কয়েক বছর ধরে রপ্তানিতে ওভেন পোশাককে ছাড়িয়ে গেছে।
![](https://images.ekhon.tv/ss-1.webp)
ওভেনের চেয়ে নিট পোশাকে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ বেশি। ওভেন পোশাক রপ্তানি করে যে আয় হয় তার প্রায় ৬০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানির পেছনে ব্যয় হয়ে যায়। আর নিট পোশাকের ক্ষেত্রে রপ্তানি আয়ের ১৫ শতাংশের মতো খরচ হয় কাঁচামাল আমদানিতে। ফলে কয়েক বছর ধরে ওভেনের তুলনায় নিট পোশাক রপ্তানিতে ভালো করছে বাংলাদেশ।
বিজিএমইএ'র তথ্য বলছে, ১৯৯৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত একটানা ১৩ বছর আধিপত্য ছিল ওভেন পোশাকের। এরপর ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৫ বছর বাড়তে থাকে নিট পোশাকের চাহিদা। এর পরের ৮ বছর পুনরায় নিট পোশাক রপ্তানি কমলেও গেল ২০২০ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করেছে নিট পোশাক রপ্তানি।
সার্বিক পোশাক রপ্তানি হিসেবে নিট পোশাকের রপ্তানি ২৯ বছরে বেড়েছে ৫২ গুণ। ১৯৯৫ সালে নিট পোশাকের রপ্তানি ছিল ৫১ কোটি ডলার, যা গতবছর ২ হাজার ৬৫৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর গতবছর পর্যন্ত ওভেন পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১০ গুণ। রপ্তানিতে নিট পোশাক শীর্ষে ওঠার কারণ কি?
বিকেএমইএ পরিচালক ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ বলেন, 'মূল কারণ হচ্ছে আমাদের এখন ৩০ দিনের মধ্যে রপ্তানি করতে হয়। তাই ওভেন থেকে নিটের পোশাক বেশি রপ্তানি করতে পারছি। এটার চাহিদাও বেড়েছে। এর ডিজাইনও একটা কারণ।'
![](https://images.ekhon.tv/f-1.webp)
নিট পোশাক তৈরিতে স্বল্প বিনিয়োগ আর সময়ও লাগে কম, এসব বিবেচনায় বিশ্ব বাজারে নিট পোশাকের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বলে মনে করেন বিজিএমইএ পরিচালক আসিফ আশরাফ। বলেন, 'ওভেনের জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার হয়, নিটের ক্ষেত্রে সেটা অনেক কম লাগে। তাই অনেকের ক্ষেত্রেই সেখানে বিনিয়োগ করা সহজ হয়।'
গেল অর্থবছর ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির মধ্যে নিট পোশাকের হিস্যা ৫৫ শতাংশ আর ওভেন ৪৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসেও রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে নিট পোশাক। প্রায় ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ওভেন পোশাকে কমেছে দশমিক ২৬ শতাংশ। সামগ্রিক পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।
বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির ধারাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের অবস্থান ধরে রাখতে নিটের পাশাপাশি ম্যানমেইড ফাইবারকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলছেন।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. মাহফুজ কবীর বলেন, 'বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা পুনরুদ্ধার চলছে। আস্তে আস্তে ইউরোপ ঘুরে দাঁড়িয়েছে ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে নিট ওয়্যার এবং নন-কটন প্রোডাক্টের দিকেই যেতে হবে। এগুলোকে খুব দ্রুত তৈরি করা যায়। বিশ্বব্যাপী এর চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে।'
গেল বছর নিট পোশাক রপ্তানির ৫৫ শতাংশের গন্তব্যই ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন; যেখানে ওভেনের অবস্থান ৪১ শতাংশ।