আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

২৭ বছরেও চালু হয়নি ভোমরা স্থলবন্দরের পূর্ণাঙ্গ কাস্টমস হাউজ

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পরও চালু হয়নি পূর্ণাঙ্গ কাস্টমস হাউজ। নেই সব পণ্য আমদা‌নি রপ্তানির অনুমতিও। ফলে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা থাকার পরও দেশের অন্য বন্দরের তুলনায় পিছিয়ে আছে এই বন্দরটি।

সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ভোমরা স্থলবন্দর। এই বন্দরের ওপারে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দর। সেখান থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার।

১৯৯৬ সালে শুল্ক স্টেশন হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও ২০১৩ সালে ওয়্যার হাউজ নির্মাণের পর পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের মর্যাদা পায় ভোমরা বন্দর। তবে কাস্টমস হাউজ চালু না হওয়ায় এখনও এই বন্দর দিয়ে সব পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারেন না ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বন্দরটিতে নেই কোনো সরকারি ট্রাক টার্মিনাল, ফায়ার স্টেশন, হাসপাতাল ও পুলিশ ফাঁড়ি।

কয়েক বছর আগেও এই বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ আদা, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, আপেল,আঙুরসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হতো। তবে বর্তমানে অন্য বন্দরের তুলনায় শুল্ক ছাড় কম থাকায় কমেছে ফল আমদানি। এছাড়া সকল পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ না থাকায় বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বন্দরে সরকারি ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় সারি সারি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। ছবি: এখন টিভি

একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'ব্যবসা-বাণিজ্য এখন সেভাবে নেই। এ বন্দরে ব্যবসায়ীদের তেমন আনাগোনা নেই। এখন আমরা সব বেকার হয়ে গেছি।'

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর ভোমরা বন্দরের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। বন্দরে কাস্টমস হাউজ চালু হলে ২৪ ঘণ্টা বন্দরটি চালু থাকবে। দ্রুত সময়ে পণ্য ছাড় হলে এই বন্দরের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে ও বাড়বে কর্মসংস্থান।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এজাজ আহম্মেদ স্বপন বলেন, 'এনবিআর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থমন্ত্রণালয় এগিয়ে আসলে এ অর্থবছরের মধ্যেই আমাদের ভোমরা স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গ বন্দরে রূপান্তরিত হবে।'

সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাছিম ফারুক খান মিঠু বলেন, 'পূর্ণাঙ্গ বন্দরের কোনো লক্ষণ এখনও আমরা পাইনি। সব আইটেমের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ বন্দর বলা যেতে পারে না। পার্শ্ববর্তী বন্দরের সাথে সমন্বয় না থাকলে একটি বন্দর চলতে পারে না।'

ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান। ছবি: এখন টিভি

ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান বলেন, 'কাস্টম হাউজ পরীক্ষাধীন আছে। কাস্টম হাউজ হইলে যখন সকল পণ্য আমদানির সুযোগ থাকবে, তখন অবশ্যই আমাদের আমদানি বাড়বে।'

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্দরের চলমান উন্নয়নের কাজ শেষ হলে চালু করা হবে কাস্টমস হাউজ।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, 'এ বন্দরটিকে আধুনিকায়ন করার জন্য নানান পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ডিজিটালাইজড করার জন্য কাজ চলছে। কাস্টম হাউজ করার বিষয়টিও চলমান। অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলেই সেখানে একজন পূর্ণাঙ্গ অফিসার হয়ে আসে।’

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ ৬ মাসে এই বন্দরে রাজস্ব আয় হয় ২৭৭ কোটি ৩০ লাখ ২৯ হাজার টাকা। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৮৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৯৬ কোটি ২২ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

এসএস