সীমান্তের নামের মতোই বিরল ঘটনার সাক্ষী এই স্টেশন। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ ১৮ বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি স্থলবন্দরের কার্যক্রম।
এপার থেকেই দেখা যায় ভারতের রাধিকাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন। করোনার পর থেকে ভারত ভিসা না দেয়ায় শূন্যতা। এপারের ইমিগ্রেশন সেন্টার আর শুল্ক স্টেশন যেন অলস সময়ের প্রতীক।
ভান্ডারা ইউনিয়নের ওপারেই ভারত। স্থলবন্দরের কাজে ব্যবহার হওয়ার কথা থাকলেও মাঝে মাঝে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের বৈঠক ছাড়া আর কোন কাজে আসে না এই ভবন।
২০০৬ সালে বিরলসহ চারটি স্থলবন্দর আধুনিকায়ন করে চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। হিলি, বাংলাবান্ধা ও সোনামসজিদ ভালোভাবে চললেও বিরল রয়ে গেছে বঞ্চিত। একই বছর পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় বিরল ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। কিন্তু দুটি একতলা ভবন ও একটি দেয়াল ছাড়া আর কিছুই নির্মাণ করা হয়নি।
স্থলবন্দর চালু না হওয়ার পেছনে বাংলাদেশ ও ভারতের সড়কপথে পণ্য আনা নেয়ার চুক্তি না হওয়াকে দায়ী করছেন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশ করলেও ভারত এখনও সড়কপথের গেজেট প্রকাশ করেনি। পাশাপাশি বাংলাদেশ অংশে মূল রেললাইনের পাশে একাধিক লাইন স্থাপনের কথা থাকলেও কোন এক অজানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে প্রস্তাবনা।
বিরল রেলস্টেশন। এখন টিভি
বিরল ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহিদুর রহমান মোহন পাটোয়ারী বলেন, ‘একটি হচ্ছে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সড়কপথে এটিকে পোর্ট হিসেবে ঘোষণা দেয়া। আর যে চুক্তি আছে, সেই চুক্তি সংযুক্ত করলেই সড়কপথে আমদানি-রপ্তানি চালু হয়ে যাবে।’
ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই বিরল হয়ে ভারত ও নেপালের রেলপথে বিভিন্ন পণ্য আনা নেয়া করা হতো। ২০০৫ সালে ভারতীয় অংশের রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হলে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ অংশে ব্রডগেজ করা হলেও পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু হয়নি আনা নেয়া। এদিকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের কার্যক্রম শুরুর কথা জানান বন্দর কর্মকর্তা। আর দুই বছরের মধ্যে সমস্ত অবকাঠামো নির্মাণের আশাবাদ সহিদুর রহমান মোহন পাটোয়ারীর।
বিরল স্থলবন্দর চালু না হওয়ায় দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সড়কপথে হিলি, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী কিংবা বেনাপোল হয়ে পণ্য আনতে হয়। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবহন খরচ অনেক বেশি বেড়ে যায়। ভারত অংশের রাধিকাপুর থেকে সরাসরি কলকাতার রেল যোগাযোগ থাকায় এই পথে পরিবহন খরচ ও সময় দুটোই কমবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রেজা হুমায়ুন ফারুক চৌধুরী শামীম বলেন, ‘স্থলবন্দর চালু হলে জনগণই বেশি সুবিধা পাবে। বিশেষ করে, কম দামে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হবে। একইসঙ্গে আমাদের রপ্তানি খরচও কমে যাবে।’
বন্দর বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিরল ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের সাথে সরকারের চুক্তি ২৫ বছরের। তবে, এই চুক্তি বন্দরের কার্যক্রম চালুর দিন থেকে শুরু হবে।