বাজার , আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

শুল্ক কমানোর পরও পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী

বেড়েছে চিনি, পাম তেল ও খেজুরের দাম

শুল্ক ছাড়, এলসি সুবিধাসহ নানা উদ্যোগের পরও রমজানে অপরিহার্য ৪ ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে না। উল্টো দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বেড়েছে চিনি, তেল, ছোলা ও খেজুরের দাম।

রোজায় ইফতারের টেবিলে অন্যতম খাবার খেজুর। সারাবছর পণ্যটির চাহিদা থাকে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টন। যার অর্ধেক চাহিদা থাকে কেবল রমজানকে ঘিরেই। ব্যবসায়ীদের পরামর্শে এবার দাম কমাতে শুল্কছাড় দেয় এনবিআর। এতে কেজিতে অন্তত ৪০ টাকা দাম কমার কথা। কিন্তু এরইমধ্যে সবধরণের খেজুরে দাম বেড়েছে ১শ' থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীদের দাবি, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। পুরনো খেজুরও বাড়তি দরে বিক্রি করছেন তারা।

মেসার্স আল হেরামাইন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জাকের সওদাগর বলেন, 'সিন্ডিকেটের হাতেই এই দেশ জিম্মি। যারা বড় বড় গ্রুপ আছে ওদের হাতেই দেশ জিম্মি হয়ে গেছে। ওরা যেটা বলে সেটাই হয়। বাজারকে এখন আগুন করে ফেলছে। ওদের হাতে মালামাল আছে কিন্তু বিক্রি করবে না।'

অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে ৫শ' টাকা আর পরিশোধিত চিনিতে শুল্ক কমানো হয়েছে এক হাজার টাকা। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল সুগার অর্গানাইজেশনের তথ্য বলছে, বিশ্ববাজারে চলতি মাসের শুরুতে চিনির দাম ছিল প্রতি টন ৬৪৭ ডলার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬২৩ ডলারে। অথচ দেশের বাজারে বেড়েছে পণ্যটির দাম। এক সপ্তাহ আগে পাইকারিতে কেজিপ্রতি ১৩২ টাকার চিনি এখন দুই টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩৪ টাকায়।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আলমগীর পারভেজ বলেন, 'গতবছর সয়াবিন ভোজ্য তেল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ছিল। এখন ভোজ্য তেল ১৫০ টাকা। চিনিরটা না কমিয়ে ভোজ্য তেলেরটা বেশি কমিয়েছে। সেই হিসেবে অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমে গেছে কিন্তু চিনির বাজারটা বেশিই রয়ে গেছে।'

বেড়েছে তেলের দামও। গত সপ্তাহে পাইকারিতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬১ টাকা, পাম তেল ১৩১ টাকা ও সুপার পাম তেল ১৩৪ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন সয়াবিন তেল ১৫৫ টাকা, পাম তেল ১৩৪ টাকা ও সুপার পাম তেল ১৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দেশে ছোলার চাহিদা সারা বছর দেড় লাখ টনের মতো। কেবল রমজানেই চাহিদা থাকে ১ লাখ টনের মতো। গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানেও পণ্যটির দাম পাইকারিতেই বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা।

খাতুনগঞ্জ আড়ৎদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, 'জেলা প্রশাসন প্রতিনিয়ত মনিটরিং কন্টিনিউ করলে আমার মনে হয় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে থাকবে এবং দামগুলো বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিবেচনা করবে। আমাদের এখানে যদি এক টাকা বেড়ে যায় দেখা যাচ্ছে খুচরা পর্যায়ে সেটা দশ টাকা বেড়ে যাচ্ছে।‌'

বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা না থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে সব পদক্ষেপই ভেস্তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরাই।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক এহসান উল্ল্যাহ জাহেদী বলেন,'আসলে খেজুরের প্রত্যাশিত যে দাম কমার সেটি কমেনি বিভিন্ন কারণে।  আপনারা জানেন গতবছর ডলারের দাম ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, সেখানে এটি এসে দাঁড়িয়েছে ১২০ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে। অতএব এইখানে ডলারের মাধ্যমে ৪০ শতাংশ খেজুরের দাম গত বছর থেকে এইবছর বেশি  আছে।'

গত ৮ ফেব্রুয়ারি চার পণ্যের শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এরমধ্যে চিনিতে প্রতি মেট্রিক টনে ৫০০ টাকা কমিয়ে ১ হাজার টাকা, খেজুরে শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, তেলে ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং চালে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার এবং ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

ইএ