গত কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশও। সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লেও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি।
বিশেষ করে পণ্য ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানির ব্যয় বেড়েছে হু হু করে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় থেকে প্রাপ্ত ডলার দিয়ে মিটছে না সার্বিক চাহিদা। ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি মেটাতে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রবাসী আয় বাড়াতে গত দু'বছর ধরেই বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছে সরকার। কিন্তু খোলা বাজার থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দামের পার্থক্য বেশি থাকায় খুব একটা সুফল মেলেনি তা থেকে।
এ কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে তফসিলি ব্যাংক ও খোলা বাজারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কয়েক দফায় সমন্বয় করা হয় ডলারের দাম। এছাড়া সরকারের পাশাপাশি প্রবাসী আয়ে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেয়া শুরু করে তফসিলি ব্যাকগুলো।
এর ফলে গত বছর অক্টোবর থেকে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে রেমিট্যান্সে। এই ধারাবাহিকতায় জানুয়ারি মাসে গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ২১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
এদিকে জানুয়ারিতে আমদানি দায় মেটানো সহ বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সবমিলিয়ে মাস শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫.০৯ বিলিয়ন। তবে আইএমএফ নির্দেশিত বিপিএম-৬ অনুযায়ী এই রিজার্ভ ১৯.৯৪ বিলিয়ন।
রেমিট্যান্সের এই ধারা অব্যাহত রাখতে খোলা বাজার ও ব্যাংকের ডলারের দামের পার্থক্য কম রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ নুরুল আমিন বলেন, 'হুন্ডির চাপ একটা বড় কারণ হয়ে আছে। এজন্য বড় কারণ হচ্ছে ডলারের দাম।'
অপরদিকে রিজার্ভ ঠিক রাখতে ডলারের দামে স্থিতিশীলতা জরুরী বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'আমাদের যেন আরও রেমিট্যান্স আসে তা চেষ্টা করতে হবে। এবং আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে। এ দু'টির জন্যই টাকার অবনোমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে রপ্তানি করার প্রতিযোগিতা বাড়বে। এবং রেমিট্যান্স ইনফরমাল থেকে ফরমালে আসার জন্য প্রণোদনা বাড়বে।'
আগামী মার্চ থেকে শুরু হবে ডলার দাম নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখা না গেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বা রিজার্ভ ধরে রাখতে এ নিয়ম খুব একটা কাজে আসবে না। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে যাওয়ায় এবং সামনের মাসগুলোতে উৎসব-পার্বণ থাকায় প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।





