বর্তমান বাজারে মাছ মাংস আর ডিমসহ আমিষ জাতীয় খাবার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এখন অনেকটাই বিলাসিতা। আর স্বল্প আয়ের মানুষের সামর্থ্য থাকলেও বাড়তি অর্থ গুণতে চাপে পড়তে হয় তাদেরকেও।
বাজার খরচের এমন বোঝা গত কয়েক বছর ধরেই বেড়ে চলেছে। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ১৫ বছরে মূল্যস্ফীতি আড়াই গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। এতে ২০০৮ সালে যে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশের ঘরে ছিল তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০২৩ সালে ১২ শতাংশ আর ২০২৪ সালের ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
এই সময়ে অপরিকল্পিত উন্নয়ন, রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি, বছরের পর বছর বাজেটের ঘাটতি পূরণে টাকা ছাপানো, অর্থ পাচার ও আত্মসাতের কারণে এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাই মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে ৯-৬ এর সুদ হার থেকে বেরিয়ে আসে তৎকালীন সরকার। বাড়াতে শুরু করে সুদের হার। এরপরও কোনো সিদ্ধান্তই কাজে আসেনি। কারণ সুদ বাড়লেও সরকার ও দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অর্থ সহায়তা দিতে টাকা ছাপাতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
এমন পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্যান্য খাতের সাথে দেশের অর্থনীতি ও আর্থিক খাত সংস্কার শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রথমে টাকা ছাপিয়ে সরকার ও দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেয়া বন্ধ করা হয়। এছাড়া ধাপে ধাপে বাড়ানো হয় সুদ হার।
এরই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী সরকার পতনের পর তৃতীয়বারের মতো বাড়ানো হয়েছে নীতি সুদ হার। মঙ্গলবার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে তা ১০ শতাংশ করা হয়েছে । যা আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। এর আগে গত দুই মাসে আরও দুই দফায় এই হার বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নীতি সুদহার বাড়লে আমানত ও ঋণে সুদ বাড়ায় তফশিলি ব্যাংকগুলো। সেক্ষেত্রে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে হয় ব্যবসায়ীদের। যার প্রভাব পড়ে উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দামে।
সেক্ষেত্রে সুদ বাড়ার কারণে আগামীতে ব্যবসা কমে আসা আর বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সে এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, 'এ বছর বিনিয়োগের পরিমাণ হয়তো কম হবে অনেক। এর থেকেও বড় শঙ্কার বিষয় হচ্ছে চলতি ঋণের প্রবাহ যদি ক্রমাগত কমতে থাকে তখন যে শুধু নতুন বিনিয়োগ বন্ধ হবে তা না, আগের যে বিনিয়োগগুলো আছে সেগুলোও ছোট হতে পারে।'
এদিকে সুদহার বাড়ানোর প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা আর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই হার বৃদ্ধির ফলে উৎপাদনের খরচসহ পণ্যের বাড়বে। তাই শুধু সুদ হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি ও সাধারণ মানুষের উপর দামের চাপ কমানো সম্ভব নয়। সাথে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার দরকার বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী।
আশরাফ আহমেদ বলেন, 'ফান্ডামেন্টাল জিনিস হচ্ছে যদি দাম কন্ট্রোল করতে হয়, তাহলে মনে করি না দাম কমের কোনো মেকানিজম কাজ করে। তার সাধারণ কারণ হচ্ছে বাজারভিত্তিক অর্থনীতি যখন বলা হয়, সেখানে কন্ট্রোল প্রাইজ বলে কোনোকিছু কাজ করে না।'
মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদ হার বৃদ্ধি মুদ্রানীতির একটি অংশ মাত্র। এজন্য রাজস্ব, আর্থিক ও মুদ্রানীতি তিনটিরই সামঞ্জস্য দরকার। সেই সাথে চাহিদার বিপরীতে বাজারে পণ্য সরবরাহ কয়েকগুণ বাড়াতে হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।