ব্যাংক একীভূত নীতিমালায় যেসব ঘাটতি দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও খাত সংশ্লিষ্টরা

0

নেতিবাচক অবস্থা কাটিয়ে তুলতে ও সুশাসন নিশ্চিতে চলতি বছরের শুরুতে ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নির্দেশনায় ব্যাংকের ক্ষতি করা পরিচালকদের ছাড় দেয়া হয়েছে বলে জানান খাত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও নীতিমালায় বেশ কিছু ঘাটতির কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

দেশে ব্যাংকিং খাতে লাগামহীনভাবে ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি ও সুশাসনের ঘাটতি দীর্ঘদিনের। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। এতে তারল্য সংকটে রয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক। একইসঙ্গে পর্ষদের নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থানে।

এসব কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি কমিয়ে আনা ও সুশাসন নিশ্চিতে ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালের আইন অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে কাজ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বর্তমানে দেশে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। এর মধ্যে দুর্বল ১১টি ব্যাংক একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবগুলো দুর্বল ব্যাংক একত্রিত হলে ব্যাংকের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ৫০টিতে।

তথ্য অনুযায়ী, একীভূত হওয়া ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তিন বছর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকবেন। পরবর্তীতে তাদের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। একইভাবে পুরানো পরিচালকরা নতুন ব্যাংকের বোর্ডে পাঁচ বছর পর্যন্ত যুক্ত হতে পারবেন না। এর পরে তাদের সুযোগ রয়েছে। তবে সরকারি ছাড়া বেসরকারি দূর্বল ব্যাংকের এমডি-ডিএমডি নতুন ব্যাংকে নিয়োগ পাবেন না।

অপরদিকে ব্যাংক একত্রিত হওয়ার পর দুর্বল ব্যাংক বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে মার্জ করা ব্যাংক নতুন নাম প্রস্তাব বা পুরানো নামেই কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

ব্যাংক একত্রিত হওয়ার পর প্রয়োজনমতো ৬ ধরনের নীতি সহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া আবেদনক্রমে সরকার থেকে বিশেষ নীতি সহায়তা দেওয়া হতে পারে বলে জানানো হয়।

ব্র্যাক ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক মহিউদ্দীন

নীতিমালায় পুরানো পরিচালকদের বোর্ডে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া ঠিক হয়নি বলে জানান ব্র্যাক ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক মহিউদ্দীন।

তিনি বলেন, 'উদ্বেগজনক বিষয়টি হচ্ছে যাদের কারণে এই ব্যাংক একত্রিত করার কথা বলা হচ্ছে, তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা নেই। তাদের কীর্তিকলাপের জন্যই তো ব্যাংকগুলোর এই অবস্থা। তাহলে তাদের শাস্তিটা হলো কোথায়। দেশে জবাবদিহিতার বিষয়টি নিয়ে আমরা সন্দিহান।'

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বীমা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, 'একীভূতকরণ নীতিমালায় কিছু ঘাটতি আছে। একটা ব্যাংক কেন দুর্বল হচ্ছে। এ বিষয়টা নীতিমালায় থাকা দরকার ছিলো। দেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলো যে আর্থিক ক্ষতির সমুখীন হচ্ছে, দুর্বল ব্যাংক কিাভাবে সবলে রুপান্তরিত হতে পারে এ ব্যাপারে একটা গাইড লাইন দরকার ছিলো।'

অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের যে অবস্থা তাতে একীভূত না করে দুর্বল ব্যাংককে অবসায়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আমানতকারীদের অর্থ ও ঋণ খেলাপির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে ব্যাংকের ক্ষতি করা ব্যক্তিদের‌ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াটা জরুরি ছিল বলে জানান‌ তারা।