জব্দকৃত অর্থ-সম্পত্তি দিয়ে তহবিল গঠন করবে সরকার: গভর্নর

ড. আহসান এইচ মনসুর
ড. আহসান এইচ মনসুর | ছবি: এখন টিভি
0

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আত্মসাৎ ও পাচার হওয়া অর্থের এখন পর্যন্ত যেসব অর্থ ও শেয়ার জব্দ করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে তহবিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান সরকার— এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। যা শুধু দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যবহার করা হবে। আজ (সোমবার, ১৯ মে) উপদেষ্টা পরিষদের সাথে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানায় গভর্নর। তিনি জানান, যেসব অর্থ ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ হয়েছে সেগুলো ব্যাংককে ফেরত দেয়া হবে। আর যে অর্থ এর বাইরে নেয়া হয়েছে তা দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে।

দেশের আর্থিক খাত ধসিয়ে দেয়া এস আলম গ্রুপ একাই ছয়টি ইসলামিক ব্যাংক থেকে ঋণের নামে লুট করেছে কয়েক লাখ কোটি টাকা। এরমধ্যে শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই আত্মসাৎ করেছে দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। যার ৭০ হাজার কোটি টাকার খোঁজ পাওয়া গেছে। একইভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সালমান এফ রহমান ও নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ আরো অনেকে।

যে অর্থ দিয়ে তারা দেশে বিদেশে গড়েছে অবৈধ সম্পদ। দায়িত্ব নেয়ার পর সেই অর্থ ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এখন পর্যন্ত যেসব অর্থ ও শেয়ার জব্দ করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে বিশেষ তহবিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যা শুধু দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে। তবে ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফেরত দেয়া হবে। সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, ‘যাদের নামে বিভিন্নরকমের অর্থ আত্মসাৎ এবং পাচারের মামলা আছে তাদের ডিপোজিট করা অর্থ এগুলো। সেগুলোকে জব্দ করা আছে। সেগুলোর ব্যবহার কীভাবে হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আবার আমাদের হাতে বেশকিছু বড় আকারের শেয়ার আছে। যেগুলো যারা পালিয়ে গেছে তাদের শেয়ার। সেগুলো জব্দ করা আছে।’

এখন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জব্দ করা অর্থ, শেয়ার ও সম্পদের মূল্য প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। আর বিদেশ থেকে পাওয়া গেছে ১৮ কোটি ডলারের বেশি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আভ্যন্তরীণ হচ্ছে এক লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। আর বিদেশে অ্যাটাচমেন্ট রয়েছে ১৬৪ দশমিক ০৩ মিলিয়ন ডলার। আর অস্থাবর সম্পত্তি ফ্রিজিং হয়েছে ৪২ হাজার ৬১৪.২৭ কেটি টাকা।’

এদিকে মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর জানান, যদি ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়ে আগের অপরাধীরাই দায়িত্ব পায়, তাহলেও যেন দেশের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘তারা করেছে, এটা অ্যাবসলিউটলি পজিটিভলি অনৈতিক। তারা জালিয়াতি করেছে। এটা নকল করে টাকা ছাপানোর মতো। তারা অতিরিক্ত টাকা বাজারে ছেড়েছে যেটা ছাড়ার অধিকার তাদের নাই। আইন হচ্ছে এক টাকা ব্যাংকে রেখে এক টাকা ই-মানি ক্রিয়েট হবে। কিন্তু তারা যে টাকা ব্যাংকে রেখেছে তার থেকে ৬৫০ কোটি টাকা বেশি ই-মানি ক্রিয়েট করেছে।’

গভর্নর আরও জানান, যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে তারা সাহায্য করতে আগ্রহ জানিয়েছে। আইনি কাঠামো তৈরি করে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আর সেটি করা গেলে আগামীতে আর্থিক খাত ঘুরে দাঁড়াবে বলেও আশা প্রকাশ করেন গভর্নর।

এসএস