অর্থনীতি
0

স্বাধীনতা-সমৃদ্ধির সূচকে পিছিয়েছে বাংলাদেশ: আটলান্টিক কাউন্সিলের রিপোর্ট

গ্লোবাল ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি রিপোর্ট অনুযায়ী, স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির সূচকের পাশাপাশি নির্বাচন ও রাজনীতিতে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সামান্য এগিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও কূটনীতিকরা বলছেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করলেও অর্থনীতি, রাজনীতি ও সুশাসনের সূচকে পিছিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর সেজন্য দরকার রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ও সুশাসন।

আজ (মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত 'প্রসপারিটি অ্যান্ড গুড গভর্নেন্স' শীর্ষক সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গতি এনেছে শহরের পাশপাশি গ্রামেও।

যদিও গ্লোবাল ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি রিপোর্ট অনুযায়ী, স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির সূচকে গত ২২ বছর ধরে অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। আটলান্টিক কাউন্সিলের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতা সূচকে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৪টি দেশের মধ্যে ১৪১তম আর সমৃদ্ধি সূচকে অবস্থান ৯৯তম।

সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি সেন্টারের পরিচালক জোসেফ লেমোইন।

তিনি বলেন, ‌‘উপাত্ত বলছে, যেসব দেশে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে, সেসব দেশে অধিকতর সমৃদ্ধিও দেখা যায়। অন্যদিকে যেসব দেশে কম স্বাধীনতা রয়েছে। সেখানে কম সমৃদ্ধি থাকার প্রবণতা রয়েছে। যেসব দেশ শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থাসহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করে, তারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি করে স্বাগত জানায়। এসব দেশ কম স্বাধীনতা থাকা দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি বিদেশি বিনিয়োগ পায়।’

প্রতিবেদন উপস্থাপন করছেন জোসেফ লেমোইন। ছবি: এখন টিভি

ইউএসএআইডি এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সমৃদ্ধি ও সুশাসন সন্মেলনে প্রকাশ করা তথ্যে বলা হয়, গেল ২২ বছরে স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়েছে ২৫ ধাপ। অর্থনীতিতে ২ ধাপ আগালেও নির্বাচন ও রাজনীতিতে পিছিয়েছে যথাক্রমে ৪১ ও ৩২ ধাপ।

সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘স্বাধীনতার পর উন্নয়নে বাংলাদেশ ভালো করেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবার পথে। বিশ্বের ১৬৪ দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অর্জন ভালো করেছে।’

তিনি বলেন, ‘তবে ইকোনমিক, পলিটিক্যাল, রুল অব ল এসবে বাংলাদেশের ফ্রিডম এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। দুর্নীতি, রাজনৈতিক অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার, নির্বাচন ব্যবস্থায়ও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। যা গুড গভর্নেন্সের পথে বড় বাধা হিসেবে থেকে গেছে।'

যদিও বাংলাদেশের স্বাধীনতার অগ্রযাত্রায় সহায়তা করতে তার দেশ অঙ্গীকারবদ্ধ বলেও জানান পিটার হাস।

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাকে প্রভাবিত করে। উভয়ক্ষেত্রেই সমান গতিশীলতা থাকতে হবে। তবেই সুশাসন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে দেশে।'

অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'বহু সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নমুখী। সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে সুশাসন অসম্ভব। সাথে লাগাম টানতে হবে দুর্নীতিরও।'

এ সময় বক্তারা দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন।

এসএস