অর্থনীতি

মূল্যস্ফীতির চাপে বাইক বিক্রি কমেছে

অর্থনীতি স্বাভাবিক হলে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা

একসময়ের শখের বাইক এখন প্রয়োজনের বাহন। যাতায়াতের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে ও জীবিকার খরচ মেটাতে ২০১৬ সালের পর ব্যবহার বাড়ে দুই চাকার ইঞ্জিন চালিত সাইকেলের। কিন্তু করোনার পর রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেলের বিক্রি বাড়লেও ২০২৩ সালে তা অনেকটাই কমে গেছে। তবে ডলারের দাম ও মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক হলে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

আব্দুস সামাদের জীবন এখন আর আগের মতো নয়। অফিস শেষ, নিজের বাহন, তারপরই রাস্তায় নেমে যাওয়া। জট আর ভোগান্তির শহরে তার কাছে একটি বাইক স্বস্তির উপলক্ষ্য। শুধু আব্দুস সামাদ নয়, তার মতো আরো অনেকেই আছে যারা সময় বাঁচাতে ও যাতায়াতে জ্যাম এবং নানা ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করছেন দুই চাকার মোটরসাইকেল।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক সিগন্যালে বসে থাকা এবং লোকাল পরিবহনের ধীর গতি ও নানা ঝামেলায় নষ্ট হয় কারো জীবনের অনেক আনন্দময় মুহূর্ত। কারো আবার প্রতিদিনই কয়েকঘণ্টা সময় অপচয় হয়। সেসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে চাকরিজীবী মানুষরা বেছে নেন এই মোটরসাইকেল।

সামাদ বলেন, ‘প্রথমদিকে বাসে যাতায়াত করতাম। খুব কষ্ট হতো, আর সময়ও নষ্ট হতো। আর প্রায়ই অফিসে পৌঁছাতে লেট হয়ে যেতো। পরে কিছু টাকা গুছিয়ে বাইকটি কিনি, এখন অন্তত সময়টুকু নষ্ট হচ্ছে না।’

তবে গত কয়েক বছরে শখ ও যাতায়াতের প্রয়োজন ছাড়াও অনেকে জীবিকার তাগিদে এই বাহনটি বেছে নিয়েছেন। দেশে রাইড শেয়ারিং সুবিধা আসার পর অনেকেই নতুন করে মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেন। করোনায় চাকরি হারানো, কিছুটা বাড়তি আয় বা ব্যক্তিগত খরচ মেটানোর জন্য এই পেশায় বাইক চালকের‌ সংখ্যা বাড়তে থাকে।

এক চালক বলেন, ‘বাইকটি রাইডের জন্যই কেনা। রাইড শেয়ারিং করেই জীবিকা নির্বাহ করছি।’

এখন শুধু শহর নয়, গ্রামেও এই দুই চাকা যানের চাহিদা বেড়েছে। এক সময়কার ঘরে ঘরে সাইকেলের বিপরীতে দেখা মিলছে বাইকের চলাচল। কাজের বা জীবিকার প্রয়োজনে এর ব্যবহারও বেড়েছে।

বিআরটিএর পরিসংখ্যান বলছে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত মোট মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৪৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে ঢাকা শহরে রয়েছে ১১ লাখ ১৪ হাজার ৮০১টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ২০১৯ এবং ২০২২ সালে। ২০১৬ সালে সেবা চালু এবং ২০২০ এর করোনার পর অনেকের রাইড শেয়ারিংয়ে আগ্রহ বাড়ে, আর সে সময়ই বেড়েছে বাইক বিক্রি।

তবে ২০২৩ সালে তেমন ব্যবসা করতে পারেনি দেশের মোটরসাইকেলের কোম্পানিগুলো। ডলার ও মূল্যস্ফীতির চাপে বিক্রি ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ কমেছে বলে জানান কোম্পানির কর্মকর্তারা।

টিভিএস অটো বাংলাদেশ-এর সিইও বিপ্লব কুমার রায় বলেন, ‘করোনার সময়ও এই ইন্ডাস্ট্রির গ্রোথ চলমান ছিল। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতির কারণে এই ইন্ডাস্ট্রি চ্যালেঞ্জে পড়েছে।’

তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে গ্রাহকের সক্ষমতা বাড়লে সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘ডলারের মূল্য অনেক বেশি। এতো বেশি ধাপে ধাপে বেড়েছে যে, মোটরসাইকেলের দামও বেড়ে গেছে। যেখানে কাস্টমাররা আর সামলে উঠতে পারছে না।’

এমন পরিস্থিতিতে বাইকের ওপর থাকা শুল্ক কিছুটা সমন্বয় করা হলে ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করবে বলে জানান তারা।

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর