পৌষের শীতের সন্ধ্যায় নেমতন্নের পসরা। যুগল জীবনের পথচলার গল্পে সামিল হওয়ার ব্যাকুলতা।
মৌসুমের হাওয়ায় বিয়ের সুবাস। শীত সোহাগী বাঙালির ঘরে ফুটছে বিয়ের ফুল। বাজছে বিয়ের বাদ্য।
বিয়ের আচারে লেগেছে বৈশ্বিক হাওয়া। তাতে ব্যাপ্তি বেড়েছে আনুষ্ঠানিকতায়। ফর্দে যোগ হয়েছে নতুন উপকরণ, সাজ সরঞ্জাম।
বিয়ে, বাগদান, গায়ে হলুদ কিংবা বৌ-ভাত, উৎসবের আয়োজন ঘিরে চাঙ্গা হয় বাণিজ্য। বেনারশি থেকে শেরওয়ানী, স্বর্ণালঙ্কার। বর-কনের সাজসজ্জা আর আপ্যায়ন ঘিরে অনুষঙ্গের শেষ নেই। কিন্তু তাতে কি ঝাপটা লাগেনি মূল্যস্ফীতির বৈরি হাওয়ার?
একজন ক্রেতা বলেন , 'এখন বিয়ের থেকেও অন্যান্য যে খরচ এড হচ্ছে সেটা ফটোগ্রাফি, ডেকোরেশন বা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে যা হচ্ছে এগুলো এখন বিলাসিতা পর্যায়ে চলে গেছে।'
অন্য একজন ক্রেতা বলেন, 'সবকিছুর দাম বাড়তি, সেজন্য প্রচুর পরিমাণ বাজেট নিতে হচ্ছে।'
স্বর্ণের চাকচিক্য ছাড়া বিয়ে যেন কল্পনাতীত। গহনার আভিজাত্যে কনে পায় বাড়তি সৌন্দর্য। কিন্তু ঊর্ধ্বগতির বাজারে গহনার তালিকা ছোট হচ্ছে খানিকটা।
একজন ক্রেতা বলেন, 'আগে একটু বড় গহনা দেখে কেনা হতো, এখন দাম বাড়ার কারণে ছোট গহনা দেখে কেনা হচ্ছে।'
একজন বিক্রেতা বলেন, 'বিয়ের সিজনে টুকটাক কেনাবেচা হচ্ছে। কিন্তু আগে যেরকম ছিল তার চেয়ে কিছু কম।'
বিয়ে বাণিজ্যের কারিগর বাড়ছে দিন দিন। নানা পেশার মানুষের জীবিকার পরিসর বাড়িয়েছে বিয়ে। যৌথতার গল্প ঘিরে তাই অংক কষছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই।
আনন্দ আয়োজনের নেমন্তন্নে থাকে নানা পদের পসরা। অতীতে বাড়ির উঠোনের আহার আয়োজন গড়িয়েছে কমিউনিটি সেন্টারে। আপ্যায়নের ভিন্নতার সাথে বেড়েছে ব্যয়ও।
প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারের চেয়ারম্যান শাহ জাকির হোসাইন বলেন, 'দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আগে যে প্রোগ্রামটা ৪০০ মানুষের হতো সেটা এখন ২০০ মানুষের করছে। গেস্টের পরিমাণটা তারা কমিয়ে নিয়ে আসছে। আমি জানি না, এটা নানান রাষ্ট্রীয় কারণেও হতে পারে। ভাড়া কত? খাবারের কত? সেটা এখন আর তারা বুঝতে চায় না। সবাই এখন প্যাকেজের কথাই চিন্তা করে।'
বিয়ের অর্থনীতির পরিধি বাড়ছে দিন দিন। ডেস্টিনেশন ওয়েডিং, ওয়েডিং প্ল্যানার, ইভেন্ট অর্গানাইজার আর ছবির কবিরা পরিসর বাড়িয়েছেন নিজেদের। ক্যামেরার লেন্সে বন্দী রাখার প্রাণান্ত এই চেষ্টায় কর্মসংস্থান আর আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে তরুণদের।
ব্রাইডাল থিওরির চিফ ফটোগ্রাফার রক্তিম সৈকত বলেন, 'ঢাকার বাইরে বেশি কাজ পাচ্ছি ইদানিং। কিন্তু আমরা ঢাকাতেই বেশিরভাগ সার্ভিস দিয়ে থাকি। আর মধ্যবিত্ত পরিবারের যারা আছে তারা অনলি ফটোগ্রাফিটা বেশি চুজ করতে চায়। আর যারা একটু পশ আছে তারা কম্বো নিচ্ছে। যখন আরও সময় যাবে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি ইন্ডাস্টিটা আরও বড় হবে, মানুষ দেখবে।'
অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান বলেন, 'সামাজিক দিক থেকে দেখি বং পরিবারিক দিক থেকে দেখি তাহলে আমি মনে করবো যে, এটার মধ্যে কটা বাণিজ্যিকিকরণ হয়েছে। এবং এটার মধ্যে যে যেরকম একটা প্রাণ ছিল পারিবারিক প্রাণ, এবং আমরা যে পাড়া বা মহল্লায় মানুষ হয়েছি তার যে একটা প্রাণ, সে প্রাণটা আর নেই।'
বিয়ের সামাজিকতায় বাণিজ্যের নানা দিক যুক্ত হলেও, সবার আশা, আয়োজনের ভিন্নতায় যেন হারিয়ে না যায় পুরনো চল আর অমলিন থাক একান্নবর্তী উৎসবের ছোঁয়া!