বাঙালি নারী, আর তার শাড়ি পছন্দ নয়! এমনটা হয়তো হাতে গুণেও পাওয়া ভার। নারী আর শাড়ি যেন একই সুতোয় গাঁথা। পোশাকটি আরামদায়ক হওয়ায় নারীর মনে স্বপ্নের বুননে ফুটে ওঠে সিল্কের শাড়ি। তাইতো ঈদের আনন্দে ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের মিশেল ঘটাতে শাড়ি কিনতে ধুম পড়েছে রাজশাহী বিসিকের রেশম পল্লিতে।
আবহাওয়া ও ক্রেতা চাহিদা মাথায় রেখে এবারের সিল্ক, তসর, বলাকা, সফট, এন্ডি, ধুপিয়ান, মটকা ও মসলিনের ওপর কাজের ভিন্নতা এসেছে। চার হাজর থেকে ৬৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এসব শাড়ি। যা কিনছেন রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতারা।
ক্রেতাদের মধ্যে একজন বলেন, 'যদি ঐতিহ্যবাহী কোনো জিনিস পরিধান করি তাহলে তো সেটা উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এখানকার সিল্ক শাড়িগুলো অনেক সুন্দর। সেজন্যই এখানে এসে সিল্কের শাড়ি দেখা বা নেয়া।'
শাড়ির পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর থেকে জনপ্রিয় হচ্ছে সিল্কের থ্রি-পিসও । এছাড়া ছেলেদের জন্য সিল্কের পাঞ্জাবিতে এম্ব্রয়েডারি, এপ্লিক ও প্রিন্টের কাজে এসেছে নতুনত্ব। গতানুগতিক ডিজাইনের বাইরে পণ্য পাওয়ায় নিজের ও প্রিয়জনের জন্য কিনছেন ক্রেতারা।
ক্রেতাদের মধ্যে একজন বলেন, 'স্বামীর জন্য কিন্তু আজ একা একা আসছি। গিফট দেবো তাই। কিন্তু আমার ছেলেদের এখান থেকে কেনা হয়েছে পাঞ্জাবি, শার্ট।'
ক্রেতার মনোযোগ টানতে বছর বছর রং, ডিজাইন ও ফ্যাশনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে সিল্কে। ক্রেতা টানতে সবরকম দাম ও মানের পোশাক রাখছেন সিল্কের শো-রুমগুলো এতেই বাড়ছে ক্রেতার আগ্রহ ও বেচাকেনা।
বিক্রেতাদের মধ্যে একজন বলেন, 'আমাদের অনেক আইটেম থাকে। সবাই পছন্দ করার মতো জিনিস থাকে, যেন একজন ক্রেতা এসে দেখে পছন্দ করে। তাকে অনেক জায়গায় ঘুরতে না হয়। প্রতিবছর নতুন নতুন ডিজাইনে কাপড় আসে আমাদের'
ব্যবসায়ীরা বলছেন সুতি কাপড়ের দাম বৃদ্ধির তুলনায় সিল্কের দাম কম, তাতে উৎসবে এই পোশাকে আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতাদের। ফলেই জমে উঠেছে ব্যবসা। বাকি দিনগুলোয় আরও জমজমাট আবার প্রত্যাশা তাদের।
রাজশাহী বিসিকের সপুরা সিল্ক মিল লিমিটেডের পরিচালক আশরাফ আলী বলেন, 'প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা ভালো প্রস্তুতি নিয়ে যতখানি সম্ভব নতুনত্ব ডিজাইন, কালার, প্যাটার্নের কম্বিনেশনে নতুন পোশাক আনার চেষ্টা করেছি। এবং এখন পর্যন্ত আমরা দেখেছি রেসপন্স খুব ভালো।'
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, 'বিসিক এলাকার মধ্যে আমরা প্রায় ৫০ কোটি টাকার মতো সিল্কের ব্যবসা করতে পেরেছিলাম। শুধু যে শো-রুমেই দেয়া হয়, তা না, আড়ংসহ আরও অনেক জায়গায় দেয়া হয়। সে অনুযায়ী এবার রাজশাহীতে আশা করি ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।'
ঈদের তিন মাস আগে থেকেই শুরু হয় সিল্কের থান কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা, যা শেষ হয় রমজানের শেষ দশকে। তবে এবার আরও বেশি অর্ডার থাকায় তা চলবে আরও এক মাস। ফলে এ বছর বিসিকে সিল্কের ১৮টির বেশি ফ্যাক্ট্ররি থেকে বেচাকেনা হবে আরও ১০ কোটি টাকা।