ফরিদপুরে বাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় আ.লীগ নেতার নামে মামলা

ফরিদপুরে হতদরিদ্রের বাড়ি পুড়ানোর ঘটনায় আ.লীগ নেতার নামে মামলা | এখন টিভি
0

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে সামেলা বেগম নামে এক হতদরিদ্রের বসতঘর পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সুভাষ সাহা (৬৮) নামে আওয়ামী লীগের এক নেতার নামে থানায় মামলা হয়েছে। তিনি উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের সাতৈর বাজার সংলগ্ন বড়নগর গ্রামের বাসিন্দা ও বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য।

আজ (মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল) বিকেলে বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের শেলাহাটি গ্রামের দিনমজুর সামেলা বেগম (৪৫) বাদি হয়ে স্থানীয় থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এর আগে শনিবার (৫ এপ্রিল) দিবাগত রাতে তার বসতঘরটি আগুনে পুড়ে যায়। মামলায় সুভাষ সাহা (৬৮) ছাড়াও তার ম্যানেজার গোবিন্দ্রের (৫৫) নাম উল্লেখ করে আরো ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী থানার ওসি মো. মাহমুদুল হাসান।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী সামেলা বেগম (৪৫) জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি স্বামী-সন্তান নিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর শেলাহাটি গ্রামের রেলওয়ের একটি জমিতে টিনের একটি ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করে আসছিলেন। পাশেই আওয়ামী লীগ নেতা সুভাষ সাহার নিজস্ব জমি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি রয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, হতদরিদ্র সামেলা বেগম যেখানে বসত করেন সেই জমিটি পাওয়ার জন্য সুভাষ সাহা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বেশ কিছুদিন ধরে সুভাষ সাহা ও তার লোকজন বিভিন্ন সময় বসতবাড়ি ভেঙে দেওয়ার হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলেন।

গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়িতে কেউ না থাকার সুবাদে তার বসতঘরটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় সোমবার (৭ এপ্রিল) হতদরিদ্র সামেলা বেগম বাদি হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুভাষ সাহা (৬৮) ও তার ম্যানেজার গোবিন্দ্রের (৫৫) নাম উল্লেখ করে আরও ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বোয়ালমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করলে মঙ্গলবার বিকেলে থানায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়। মামলা নম্বর-১৩।

তবে সোমবার পুরে অভিযোগটি ভুয়া ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা সুবাস সাহা সাতৈর বাজারের নিজের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে ময়না ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মশিউল আজম মৃধা, ঘোষপুর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান, ভুক্তভোগী সামেলা বেগমের স্বামী সিদ্দিকুর রহমান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহাসহ রও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের একদিন পরে মঙ্গলবার বিকেলে থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।

সরেজমিনে জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের শেলাহাটি গ্রামে ঘোষপুর মৌজায় আওয়ামী লীগ নেতা সুবাষ সাহার নিজস্ব ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লিজ নেয়া জমি রয়েছে। সেই জমির দক্ষিণ পাশের চন্দনা-বারাশিয়া নদের পাড়ে সুবাষ সাহার কাছ থেকে কিনে ছয় থেকে সাতটি পরিবার ঘর তুলে বসবাস করছে। আর উত্তরে রেলওয়ের জায়গায় সামেলা বেগমসহ তিনটি পরিবার বসবাস করেন। সবমিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও রেলওয়ের জমিতে ভূমিহীনসহ ২৯ থেকে ৩৫টি পরিবার বসবাস করছে ওই এলাকায়।

ভুক্তভোগী সামেলা বেগম মামলা হওয়ার আগে বলেন, 'আমি তো বাড়ি দুইদিন যাবত রান্না করি না, তাহলে আগুন লাগবে কীভাবে? তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।'

তিনি বলেন, 'সুবাষ সাহার জায়গার সামনে আমরা রেলের জায়গা থাকি। আমি একটি ব্যাংকে পাহারা দেয়ার কাজ করার জন্য বাড়ি থেকে চলে আসি। রাতে মানুষের মাধ্যমে জানতে পারি আমার বাড়ি আগুন লেগেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ঈদের সময় মানুষের কাছ থেকে আনা যাকাতের টাকা, মানুষের কাছ থেকে চেয়ে আনা চাল সব পুড়ে গেছে। আগুনে ঘরে থাকা যাবতীয় জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। এখন আমি সব হারিয়ে পথে বসে গেলাম।'

রেলের জায়গায় বসবাসকারী সামেলা বেগমের মেয়ে সেলিনা বেগম বলেন, 'সুভাষ সাহার লোকজন বিভিন্ন সময় এসে বসত বাড়ি ভেঙে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল। তারা জায়গা খালি করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। হঠাৎ আগুনে আমাদের ঘর পুড়ে গেছে।'

একই গ্রামের বাসিন্দা পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় বসবাসকারী হাবিল বিশ্বাস বলেন, 'সুভাষ সাহার লোকজন বিভিন্ন সময় তার ঘর বাড়ি ভেঙে নেওয়ার হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল।'

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুভাষ সাহা মামলা রেকর্ডের আগে বলেছিলেন, 'আমার ব্যক্তিগত জায়গার সামনে আমার লিজ নেয়া রেলের জায়গায় ওই মহিলা থাকে। তিনি স্থানীয় জিয়া মেম্বারের ভাইয়ের স্ত্রী। ওই মেম্বারের মাধ্যমে কিছু টাকা দিয়ে আমি তাকে (সামেলা বেগম) ঘর করার জন্য সহযোগিতা করেছিলাম। তিনি সেখানে ঘর উঠিয়ে বসবাস করছেন।'

দিনমজুর সামেলা বেগমের বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুবাষ সাহা বলেন, 'আমি টাকা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করলাম, তাহলে আমি ঘর পুড়াবো কেন? কিছু লোকজন ঘর পুড়িয়ে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য।'

তিনি আওয়ামী লীগ থেকে গত কয়েক বছর আগে পদত্যাগ করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান। তবে পদত্যাগের কোন দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ঘোষপুর ইউনিয়নের শেলাহাটি সাবেক ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, 'শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভাতে সহায়তা করি। সামেলা বেগম কারও ব্যক্তিগত জায়গায় নয়, রেলের মালিকানাধীন জায়গায় বসবাস করে আসছিলেন।'

মঙ্গলবার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান বলেন, 'বাড়ি পুড়ানোর বিষয়ে ভুক্তভোগীর লিখিত এজাহারের ভিত্তিতে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।'

এসএস