ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যা, রিমান্ডে নির্যাতন, গুলিতে পঙ্গুত্ব, গুমের ঘটনা কিংবা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া- এ যেন কোনো ক্রাইম থ্রিলার গল্পের প্লট, কিন্তু বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন ইসলামিক ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্ট বা ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাথে এটি ঘটে যাওয়া নির্মম বাস্তবতা। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এসব অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে হাজির হয়ে লোমহর্ষক এসব ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করেন ১৪ জন। এদের মধ্যে ১০টি অভিযোগ দায়ের করে ভুক্তভোগীরা বলেন বিভিন্ন সময় ইসলামিক ব্লগ, ফেসবুক পোস্টের কারণে প্রথমে তাদের গুম ও পরে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়।
একজন শিবিরকর্মী বলেন, 'জুলুম নির্যাতনের বিচারের প্রক্রিয়াস্বরূপ আজকে আমরা এখানে এসেছি। আমাদের উপরে যে অন্যায় হয়েছে, ইসলামি ছাত্র শিবিরের ভাইদের ওপরে যে অন্যায় জুলুম হয়েছে অন্যায়ভাবে, সেগুলোর বিচার নিশ্চিত করার জন্য আমরা আজকে এখানে আদালতের মাধ্যমেই সেই পথ বেছে নিয়ে আমরা এসেছি।'
অন্য একজন শিবিরকর্মী বলেন, 'আজকে আমাদের এখানে আসা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমাদের উপর যে অন্যায় হয়েছে সেই অন্যায়ের বিচারের দাবিতে।'
আর ছাত্রশিবিরের কয়েকজন কর্মীর অভিযোগ, ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করাসহ নানা কারণে জঙ্গির তকমা লাগিয়ে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরবর্তীতে রিমান্ডের নামে নির্যাতন, এমনকি গুলি করেও পঙ্গু বানিয়ে দেয়া হয় কাউকে কাউকে। বিগত সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ২১ সদস্যকে দায়ী করে গুম কমিশনেও একই অভিযোগ করেছেন তারা।
একজন শিবিরকর্মী বলেন, 'আমাদের একটাই দোষ ছিল, সেটা হচ্ছে আমরা মুসলিম আমরা ইসলামকে ভালোবাসতাম। আর এটার অপরাধেই কোনো সময়ে আমরা দেখা গেছে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি, কোনো একটা ইসলামিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছি বিভিন্ন কারণে আমাদের উপর জুলুম করা হয়েছে।'
অন্য একজন শিবিরকর্মী বলেন, 'এই অভিযোগ দাখিলটা পর্যায়ক্রমে চলতে থাকবে। এটা এমন না যে আমরা আজকে কারও নামে অভিযোগ করে গেলাম এটাই ফাইনাল কথা।'
একজন শিবিরকর্মী বলেন, 'এই দেশে যেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, যারা জুলুম করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ক্ষমতা পেয়ে, যারা অত্যাচার করেছির, যারা গুম খুন করেছিল তাদের প্রত্যেকের যেন বিচার হয় আমরা এই বিষয়টির দাবি নিয়ে আজকে এখানে এসেছি।'
আইনজীবীর আশা ট্রাইব্যুনাল দ্রুতই এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। দোষীদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে আশাবাদী ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরও।
শিবিরকর্মীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন 'ছাত্র শিবিরের দায়িত্ব পালন করার জন্য তাদের এই সহিংসতার শিকার হতে হয়েছে। এরকম অসংখ্য নজির ইসলামি ছাত্র শিবিরে রয়েছে। আমরা সেগুলো ক্রমান্বয়ে সেগুলো উপস্থাপন করবো।'
মানবতাবিরোধী নানা ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত শতাধিক অভিযোগ দাখিল হয়েছে।