চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারের মোবাইল মার্কেটের শতাধিক দোকানে কম দামে বিক্রি হয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পুরনো মোবাইল ফোন। বাজার মূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে মোবাইল পাওয়া যাওয়ায় অল্প সময়ে মার্কেটটি পরিচিতি পেয়েছে পুরো চট্টগ্রামে। দুর দুরন্ত থেকে ক্রেতারা আসেন এখানে। কেউ আসেন মোবাইল বিনিময় করতে, কেউ পুরাতন মোবাইল বিক্রি আর কেউ বা কিনতে।
নিউমার্কেট মোড় ঘিরে এমন ২০টি মার্কেটে ৪০০ শরও বেশি দোকান আছে যারা পুরাতন মোবাইল কেনাবেচা করে। কিন্তু ফাঁক থেকে যায় এখানেই। যিনি মোবাইল বিক্রি করছেন, সে মোবাইলটি তার কি না? তা যাচাই বাছাই করেন না বেশিরভাগ দোকানি। আবার যিনি কিনছেন তিনিও জানেন না এ ফোনটা কার? কীভাবে দোকানে আসলো? আর এ সুযোগই নেয় অপরাধী চক্র।
সম্প্রতি ভারতের কলকাতার এক নারীর ব্যবহৃত আইফোন উদ্ধার হলে বেরিয়ে আসে আন্তঃদেশীয় মোবাইল পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই নারী জানান, ফোন ট্র্যাক করে তিনি দেখেন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরে এটি খোলা হয়েছে। এরপর মুঠোফোনের যাবতীয় তথ্য দিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন ভুক্তভোগী। এরপরই ফোনটি উদ্ধারে অভিযানে নামে গোয়েন্দা পুলিশ।
ভুক্তভোগী বলেন, 'চট্টগ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় মোবাইলটা পেয়েছি আমি। এপ্রিলে মোবাইলটা হারিয়েছিলাম, আর ফেরত পেলাম জুলাইয়ে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ।'
চক্রটি মূলত দেশে চুরি হওয়া মোবাইল ফোন ভারত ও ভুটানে পাঠায়, আবার সেখানখান চুরি হওয়া ফোন দেশের বাজারে নিয়ে আসে। কীভাবে এই কাজগুলো চক্রটি করে তা জানতে এখন টিভির প্রতিনিধি দল যায় পুলিশের কাছে।
পুলিশ জানায়, মোবাইলটি উদ্ধার করতে গিয়ে তারা অন্তত ৪ জনের সন্ধান পেয়েছেন, যারা সীমান্তে অন্যান্য জিনিসের মতো মোবাইলও পাচার করে। মুলত, অন্য দেশে মোবাইল চলে গেলে, সেটি উদ্ধার করা অনেকটাই অসম্ভব।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, 'রিয়াজুদ্দিন বাজার কেন্দ্রিক এদের ব্যবসা। এদের কাজই হলো বাইরে থেকে মোবাইল নিয়ে আসা। এবং সেগুলো চোরাই মোবাইল। বিভিন্ন পথে এদেশে ঢোকায়। বাংলাদেশের মোবাইলগুলো ওরা ভারত, মিয়ানমারে পাচার করে। আমরা সম্প্রতি ভূটান থেকে একটা মোবাইল উদ্ধার করেছি।'
এমন কয়েকটি ঘটনায় কড়াকড়ির কারণে এসব দোকানে বেচাবিক্রিও অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে দাবি ব্যবসায়িদের।
একজন ব্যবসায়ী বলেন, অনেক প্রবাসী ভাইরা ওই দেশে মোবাইলগুলো ব্যবহার করার পর এ দেশে সেগুলো পাঠিয়ে দেয়। এভাবেই দেশের বাইরে থেকে অনেক মোবাইল আমাদের এ বাজারে আসে।'
পুরনো মোবাইল বিনিময় বা ক্রয়-বিক্রয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ ও তরুণরা উপকৃত হয়। তাই এ ব্যবসার আইনি ভিত্তি না থাকলেও পেয়েছে জনপ্রিয়তা।