মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা

ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা
ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা | ছবি: সংগৃহীত
0

গত কয়েক বছরে বেড়েছে নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়। একটা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই হাজির হচ্ছে আরেকটা। এসে তছনছ করে দিচ্ছে জনজীবন। বঙ্গোপসাগরে নতুন করে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সাগরে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

এতে ২৪ থেকে ২৮ মের মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে এমনটা জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। তিনি বলেছেন, সিস্টেমটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে সম্ভাব্য নাম হবে ‘শক্তি’।

আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ আরো জানান, ২৪ থেকে ২৮ মের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িশা উপকূল ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যবর্তী যেকোনো স্থানের উপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানার প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সেক্ষেত্রে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও দেশের খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত বেশি।

এদিকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. সামসুজ্জোহা এখন টেলিভিশনকে বলেন, ‘সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে অবতল আকৃতির অগভীর বে বা উপসাগরে। বঙ্গোপসাগরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও বাড়তি কিছু বৈশিষ্ট্য। যেমন সমুদ্রের উপরিতল বা সি সারফেসের তাপমাত্রা। এটাও এ বছর নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।’

গ্রীষ্মকালে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ২৬.৫° বা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে ঘূর্ণিঝড়ের পরিবেশ তৈরি হয়।

সিডর পরবর্তী সময়ে মে মাসে আঘাত হানা কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে-

ঘূর্ণিঝড় নার্গিস: ঘূর্ণিঝড় নার্গিস ২০০৮ সালের ৩ মে মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানে। এ সময় বাংলাদেশে খুব একটা প্রভাব পড়েনি।

ঘূর্ণিঝড় আইলা: ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত করেছিল পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায়। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ছিল সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৯০ কিমি। বাংলাদেশে ১৯৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন: ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নোয়াখালী-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে ২০১৩ সালের ১৬ মে। এতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়।

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হেনেছিল ২০১৬ সালের ২১ মে। এতে চট্টগ্রামে ২৪ জনের মৃত্যু হয়। ৪-৫ ফুট উঁচু ঝড়ের ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লক্ষাধিক পরিবার।

ঘূর্ণিঝড় মোরা: ঘূর্ণিঝড় মোরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল এলাকায় আঘাত করে ২০১৭ সালের ৩০ মে। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতি ছিল ১১০ কিমি.। মোরার প্রভাবে উপকূলে মারাত্মক ক্ষতি হয়।

ঘূর্ণিঝড় ফণী: ২০১৯ সালের ২ ও ৩ মে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রাণ হারান ৯ জন। ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানে এবং পরে কলকাতা ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চলে যায়।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফান: ২০২০ সালে সুপার সাইক্লোন আম্ফান বাংলাদেশে আঘাত হানে ২০ মে। এতে উল্লেখযোগ্য ধ্বংস এবং প্রাণহানি ঘটে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: ২০২১ সালের ২৬ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস।

ঘূর্ণিঝড় আসানি: ২০২২ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আসানিতে প্রাথমিকভাবে অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভাবিত হয়েছে। বাংলাদেশে কম ক্ষতি হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোখা: ২০২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূলে আঘাত হানে। এতে বাংলাদেশে কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ঘূর্ণিঝড় রেমাল: প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল হলো বঙ্গোপসাগরের একটি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, যেটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। এটি ২০২৪ সালের ২৬ মে সন্ধ্যা থেকে ২৭ মে সকাল নাগাদ স্থলভাগ অতিক্রম করে। এটি ২০২৪ উত্তর ভারত মহাসাগর ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের প্রথম গভীর নিম্নচাপ, প্রথম ঘূর্ণিঝড় এবং প্রথম তীব্র ঘূর্ণিঝড় ছিল।

এদিকে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ২০০০ সালেই বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের পার্শ্ববর্তী ১৩টি দেশের প্রস্তাবনায় পরবর্তী ১৬৯টি সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণ করে রেখেছে।

বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের পরবর্তী ৩টি সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে যথাক্রমে, শক্তি (নামটি শ্রীলঙ্কার দেয়া), মোন্থা (নামটি থাইল্যান্ড এর দেয়া) ও সেনিয়ার (নামটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দেয়া)।

এএইচ