টাঙ্গাইলে ৬ দিন ধরে নিখোঁজ বনকর্মী লাল চাঁন: পরিবারে উদ্বেগ, রহস্যময় আচরণে সংশয়

বনকর্মী লাল চাঁন ও তার লেখা চিরকুট | ছবি: এখন টিভি
1

টাঙ্গাইলে ৬ দিন ধরে নিখোঁজ মধুপুর জাতীয় উদ্যান রেঞ্জে কর্মরত বনকর্মী লাল চাঁন। নিখোঁজের পর পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে লাল চাঁনের সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ায় অভিযোগ করলেও এখন অস্বীকার করছে কর্তৃপক্ষ। আর নিখোঁজের পর থেকে কর্তৃপক্ষের রহস্যময় আচরণে উদ্বিগ্ন পরিবার। জীবিত ফিরে পাওয়ার আকুতি তাদের।

গেল (বুধবার, ২৪ নভেম্বর) মধ্যরাতে টাঙ্গাইলের মধুপুরের জাতীয় উদ্যান রেঞ্জ অফিস থেকে নিখোঁজ হন বনকর্মী লাল চাঁন। পরদিন (বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর) ভোরে লাল চাঁনের বিরুদ্ধে ৩১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন রেঞ্জার মোশাররফ হোসেন। আরও জানান, মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলে চিরকুট লিখে গেছেন লাল চাঁন।

লাল চাঁনের বাবা জানান, লাল চাঁনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। সে এসব কাজের সঙ্গে জড়িত নয় বলে জানান তিনি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একজন বলেন, ‘বলা হয়েছিলো তার কাছে টাকা আছে। পরে সেই টাকা ব্যাংকে জমা হয় তো বিষয়টি তো সন্দেহজনক হয়।’

তবে কর্তৃপক্ষের দাবি মানতে নারাজ পরিবার। তারা বলছেন, বড় কোনো ঘটনা ধামাচাপা দিতেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে লাল চাঁনকে। এছাড়াও, তাদের অভিযোগ, ওই রাতের সিসিটিভি ফুটেজ, রেঞ্জারের ড্রয়ারে চাবি থাকার পরও লকার ভেঙে সাজানো হয়েছে টাকা উদ্ধারের নাটক।

লাল চাঁনের স্ত্রী বলেন, ‘অফিসের লোকেরা তাকে ডেকে এনে জানিয়েছেন অফিসের টাকা নেই।’

এদিকে, নিখোঁজের পর থেকে রহস্যজনক ও অসহযোগিতামূলক আচরণ করছেন রেঞ্জার মোশাররফ ও অফিসকর্মীরা। শুরুতে টাকা আত্মসাতের কথা বললেও এখন অস্বীকার করছেন টাকা খোয়া যাওয়ার।

আরও পড়ুন:

মধুপুর জাতীয় সদর রেঞ্জার মোশারফ হোসের বলেন, ‘এখন লকারের বিষয় হলো, লকারের চাবি আমার কাছে। যেদিন আমি তার লেখা দেখেছি সেদিনই আমি লকারের চাবি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।’

চিরকুটের হাতের লেখার সঙ্গে লাল চাঁনের লেখা ব, র, ক ও বর্গিয় জ সহ আরও কয়েকটি বর্ণে অমিল রয়েছে বলে দাবি পরিবারের।

ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা, লকার ভাঙাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার মুখোমুখি হলে শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। পরে লকার ভাঙার সময় বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে ফোন করার ভিডিও দেখালে চুপসে যান এই কর্মকর্তা। জানান তদন্তাধীন বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন তিনি।

টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই। আমরাও বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি। আপনাদের কাছেও যদি কোনো তথ্য থাকে আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। আমরা আপাতত এতটুকু বলতে পারছে সে মিসিং, পুলিশ তদন্ত করছে।

বনবিভাগের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি হওয়ায় নিখোঁজ বনকর্মী লাল চাঁনকে উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

টাঙ্গাইল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার টাঙ্গাইল আদিবুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। এখন পর্যন্ত তার হদিস পাওয়া যায়নি। কিছু চিরকুট আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের নলেজে এসেছে। আমরা সেগুলোর সত্যতা যাচাই করছি।’

লাল চাঁন নিখোঁজের পর যতই সময় গড়াচ্ছে ততোই ঘনীভূত হচ্ছে অন্তরালের রহস্য। এরইমধ‍্যে বন কর্তৃপক্ষের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা রহস্যের ডালপালা ছড়াচ্ছে আরও। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের আকুতি, জীবিত লাল চাঁনকে ফিরে পাওয়ার।

এফএস