টার্মিনালজুড়ে ছড়িয়ে আছে ভাঙা কাঁচের টুকরো। আর সেগুলো সরাতে ব্যস্ত বাস শ্রমিকরা। কেউ আবার পরিষ্কার করছেন যাত্রীদের বসার আসন। গত (রোববার, ১৬ অক্টোবর) ভোরে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে থাকা প্রায় সবগুলো বাসেই একই দৃশ্য। কেবল বাস নয়, কাউন্টারগুলোর চেহারাও একইরকম।
২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট, সপ্তাহে সাত দিনই স্থানীয় রুটে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া চালুর নির্দেশনা জারি করে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ। যদিও এ নির্দেশ কাগজে কলমে থাকলেও যথাযথ বাস্তবায়ন নেই। শ্রমিকরা এটি না মানলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও উল্লেখ ছিল নির্দেশনায়। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রয়োগ নেই বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘দফায় দফায় আমরা কয়েকবার বসার চেষ্টা করেছি তারাও বসেছেন। আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। কর্মচারীদের তীক্ষ্ণ ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীরা বিরক্ত হন।’
গত শনিবার হিজলা থেকে বরিশাল আসার পথে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে হাফ ভাড়া নিয়ে শ্রমিকদের তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা টার্মিনালে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপরই শুরু হয় বড় ধরনের ভাঙচুর। একে একে স্থানীয় ও দূরপাল্লার প্রায় সব রুটের গাড়িই ভাঙচুর করা হয়। এ সময় হামলার শিকার হন বলেও জানান শ্রমিকরা।
বাস শ্রমিকরা জানান, সামান্য হাফ ভাড়ার কারণে একটি বাস টার্মিনাল থমথমে হয়ে আছে। টার্মিনালে ছাত্ররা ভাঙচুর চালিয়েছে। পুলিশ সেখানে আসেননি।
আরও পড়ুন:
হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা শুধু বাসেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। কাউন্টারগুলোও তছনছ করা হয়। ফলে ডিজিটাল টিকেটিং ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে বাসগুলো যাত্রী পরিবহনের অবস্থায় নেই। আর এসব কারণে বাস চলাচল রোববার সকাল থেকে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
স্থানীয়রা জানান, পায়ে হেটে যেতে হচ্ছে তাদের। গাড়ি ভাড়ার জন্যও তাদের বাড়তি টাকা গুনতে হবে। তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সময়ও বেশি লাগবে।
শনিবারর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তত দুইশ বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। আর সভাপতি বলছেন, কেবল ভাঙচুর নয়, বাস কাউন্টারে লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন বলেন, লাঠিসহ দেশিয় অস্ত্র নিয়ে ১ হাজার ৫০০ এর মতো ছাত্র হামলা করেছে। স্ট্যান্ডের সকল গাড়ি ভাঙচুর করেছে।’
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, ‘গাড়ি তো মালিকের। শ্রমিকের না। আমাদের ল্যাপটপ, টাকা-পয়সা সব নিয়ে গেছে তারা।’
ঐতিহ্যবাহী বরিশাল বিএম কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় ৩০ হাজার। এর ৬০ শতাংশ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসে যাতায়াত করেন। তবে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ।
বি এম কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড শেখ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমাদের অনেক ছাত্র ছিলো। তাদের সঙ্গে আমার এ বিষয়েই কথা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আমাকে মামলা করার কথা বলেছে। আমরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা তাদের মোটিভেশন দিয়ে যাচ্ছি।’
এদিকে, সময়মত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলা, ভাঙচুর কম হতো কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিলো তবে শিক্ষার্থীরা সংখ্যায় বেশি থাকায় তারা যে যার মতো হামলা চালিয়েছে।
বরিশাল পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৫০০ থেকে ৭০০ ছাত্রদের ঠেকানোর মতো ফোর্স আমাদের ছিলো না। আমাদের ফোর্স ছিলো ২০ জন। যেহেতু একপক্ষ নেই যে যেভাবে পেড়েছে ভাঙচুর চালিয়েছে।’
ঢাকা – বরিশাল – কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। খুব কাছেই বরিশাল বি এম কলেজ ও হাতেম আলী কলেজ। এছাড়াও, আছে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাস শ্রমিকদের সঙ্গে কিছু হলেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাস টার্মিনাল ও মহাসড়কে। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।





