চোরাচালানের সক্রিয় রুট কুমিল্লা: ভারতীয় আতশবাজি ও অস্ত্রে বাড়ছে উদ্বেগ

জব্দকৃত মাল ও ট্রেন
জব্দকৃত মাল ও ট্রেন | ছবি: এখন টিভি
0

কুমিল্লার ১০৬ কিলোমিটার সীমান্ত এখন চোরাচালানকারীদের সক্রিয় রুটে পরিণত হয়েছে। ভারতীয় আতশবাজি ও অস্ত্রের অনুপ্রবেশ বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনি হাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চোরাচালানও হয়ে উঠেছে আরও সংগঠিত ও আক্রমণাত্মক। সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বাহন ট্রেন ব্যবহার করে চোরাই মালামাল ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। চলতি বছর এ সীমান্তেই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিজিবি জব্দ করেছে প্রায় ২৪ কোটি টাকার আতশবাজিই। সীমান্তের নিরাপত্তায় আরও কঠোর নজরদারির তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

কুমিল্লার রসুলপুর রেলস্টেশন, প্রায় প্রতিদিনই ধরা পড়ছে ভারতীয় চোরাই পণ্যের চালান। আর এ চালানগুলোর বড় অংশই আতশবাজি। মুহূর্তেই বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এমন আতশবাজি আটকের ঘটনায় সবার মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ।

রাজনৈতিক অস্থিরতা আর আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠিত অপরাধ চক্রের সক্রিয়তা রয়েছে বলে মনে করছে বিজিবি।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, আতশবাজির চালানের সঙ্গে একই রুটে আসছে বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্যও। এমনকি মাদকের আড়ালে অস্ত্র চোরাচালানের প্রমাণ মিলছে সীমান্তে। ত্রিপুরা সীমান্তের আশাবাড়ি, ভাল্লক, নারায়ণপুর, বাঁশতলী ও চরনল রুট হয়ে এসব পণ্য প্রথমে পৌঁছায় সালদা নদী ও শশীদল স্টেশনে। এরপর চট্টলা, কর্ণফুলী ও নাসিরাবাদ ট্রেন ব্যবহার করে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।

স্থানীয়রা জানান, বিজিবিরা এসে মাল উদ্ধার করে। তবে যে প্রকৃত অপরাধী সে বেঁচে পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন:

কুমিল্লার সীমান্ত এলাকায় বর্তমানে ১০ এবং ৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব থাকলেও শুধুমাত্র ১০ বিজিবির হিসাবেই চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জব্দ হয়েছে ৭০ কোটি টাকার বেশি পণ্য, যার মধ্যে ২৪ কোটি টাকার আতশবাজি। যা গত যেকোনো সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সীমান্ত পেরিয়ে আনা এসব আতশবাজিতে আলাদা রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে বড় ধরনের বিস্ফোরক তৈরি করে দেশে নাশকতা করা সম্ভব।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর মো. সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এখন এটি জরুরি দরকার এ ধরনের রাসায়নিক আতশবাজি যদি আসে তাৎক্ষণিক জব্দ করে তার কেমিক্যাল কম্পোজিশন অ্যানালাইসিস করা অত্যন্ত জরুরি।’

এদিকে বিজিবি বলছে, আতশবাজি চোরাচালানের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এগুলো কোথায় যাচ্ছে এবং বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদারে তৎপর বিজিবি।

কুমিল্লা ১০ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, ‘আতশবাজিগুলো কোথায় যাচ্ছে? এগুলো দিয়ে কি ধরনের কাজ করা হয় এটি নিয়ে কন্টিনিউয়াস আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা আমরা করছি। সামনে এ ধরনের তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

অন্যদিকে, সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের বিষয় উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে সীমান্ত এলাকাগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি থাকবে।

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘সীমান্তবর্তী এলাকায় চেকপোস্ট বসানো এবং শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হবে। যাতে বহিরাগত কোনো দুষ্কৃতিকারী আমাদের নির্বাচনে বাধা দিতে না পারে।’

যশপুর, নিশ্চিন্তপুর, বিবির বাজার থেকে গোমতী নদী পর্যন্ত অন্তত ২০টি পয়েন্টে চোরাচালান চলছে নিয়মিত। তাই শুধু বিজিবি নয়, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান স্থানীয়দের।

এফএস