পঞ্চগড়ের ইসলামিয়া একরামিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ এ প্রতিষ্ঠানে আমি আমার জীবনটাই নষ্ট করে ফেললাম। ১৯৯৪ সালে আমি যখন রিটায়ার্ড করলাম খালি হাতেই ফিরে আসলাম।’
এভাবেই জীবনের ক্ষয়ে যাওয়া অমূল্য সময়ের কথা বলছিলেন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার টোকরাভাসা ইসলামিয়া একরামিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম। এলাকায় তিনি সোনা মাস্টার নামে পরিচিত। অবসরে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিন দশক ধরে বেতন ছাড়াই পাঠদান করেছেন শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম।
প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় এখনও মেলেনি পেনশন। রাতে হাট পাহারা দিয়ে উপার্জিত এক-দেড়শো টাকায় চলে তার অভাবের সংসার।
ঠিক এমন অভাব নিয়েই সীমাহীন কষ্টে মারা গেছেন একই মাদ্রাসার দুই শিক্ষক। বাকিরা কেউ দিনমজুরি, কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসা করে টিকিয়ে রেখেছেন শিক্ষার আলো।
মাদ্রাসার একজন শিক্ষক বলেন, ‘এখানে কোনো বিল-বেতন নেই। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করার পাশাপাশি আমি কৃষি কাজ, মাছ চাষ করি।’
সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পাঠদানের অনুমতির দুই যুগ পার হলেও এমপিওভুক্ত হতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এতে ব্যাহত হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা, শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে। নেই স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট এমনকি সুপেয় পানির ব্যবস্থাও।
আরও পড়ুন:
শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের বিদ্যালয়ে খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। একটি স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থাও নেই। নেই কোনো কমনরুম। এলাকায় অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে সুবিধা পাচ্ছে, তারা সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
মাদ্রাসা সুপার জানান, তাদের দু’জন শিক্ষক মারা গেছেন। আর একজন বিনা বেতনে রিটায়ার্ড করেছেন। আট-দশজন মিলে প্রতিষ্ঠানটি চালানো হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন হলো চলছে। সেসময় থেকেই শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছে না। এ প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করা হলে শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে না বলে জানান স্থানীয়রা।
শুধু এ প্রতিষ্ঠান নয়, পঞ্চগড়ের ৯১টি বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে একই চিত্র। অনেক প্রতিষ্ঠান সব শর্ত পূরণ করেও দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। বছরের পর বছর বিনা বেতনে পাঠদান করছেন শত শত শিক্ষক।
অন্য নন এমপিও কলেজের শিক্ষকরা জানান, সেখানে ৩০ জন শিক্ষক রয়েছেন। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরেজমিনে তদন্ত করে দ্রুত এমপিওভুক্তির আশ্বাস জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার।
পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খায়রুল আনাম মো. আফতাবুর রহমান হেলালী বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানগুলো সরেজমিনে তদন্ত করে, যদি প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা থাকে তাহলে অতি শিগগিরই এমপিওভুক্ত করে তাদের একটি ব্যবস্থা করা হোক।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক পক্ষপাত আর প্রশাসনিক জটিলতায় দিনের পর দিন ঝুলে আছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি। শিক্ষার আলোয় যারা জাতিকে আলোকিত করছেন, তাদের ঘর আজ অন্ধকার, অভাব আর অনিশ্চয়তায় ভরা। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে তারা এখনও আশায় বুক বাঁধেন একদিন হয়তো মিলবে প্রতীক্ষিত বেতন ও মর্যাদা।





