নাইজেরিয়ায় বিমান হামলা: ট্রাম্পের দাবি নিয়ে স্থানীয়দের বিপরীতমুখী অবস্থান

নাইজেরিয়ায় বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা
নাইজেরিয়ায় বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা | ছবি: সংগৃহীত
0

নাইজেরিয়ায় বিমান হামলার পর ট্রাম্প একে 'খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের হত্যার প্রতিশোধ' বলে দাবি করলেও ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা বলছেন, হত্যা তো দূরের কথা এ অঞ্চলে কখনোই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা হয়নি। সেখানে কখনোই কখনোই ইসলামিক স্টেট বা আইএসের ঘাঁটি ছিল না বলে দাবি তাদের। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় এই আক্রমণ ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।

সন্ত্রাসীদের জন্যে এটাই হবে ক্রিসমাসের উপহার। নাইজেরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের ঘাঁটিতে হামলার দাবি করে এমনটাই বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ছবিতে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন কিছু।

এই দৃশ্য নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জাবু এলাকার। মার্কিন বিমান হামলায় ধসে গেছে বসতবাড়ি। একটুর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি অঞ্চলটিতে সচল একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র। হামলার আতঙ্কে এখনও দিশেহারা জাবুর মুসলিম কমিউনিটির এই বাসিন্দারা। অথচ তাদের দাবি, এই এলাকায় কোনোকালেই আইএসের ঘাঁটি ছিল না।

স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, রাত ১১টার দিকে প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পাই। মাকে রেখে মোবাইলের কার্ড কিনতে বাইরে গিয়েছিলাম। আচমকাই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল না। ঘরের যে দেয়াল ভেঙে পড়েছে, সেটা আমার ওপর পড়লে আর বাঁচতাম না।

আরও পড়ুন:

কিন্তু নাইজেরিয়ার সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করেই এই অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্র। রয়টার্স বলছে, সোকোটো রাজ্যের বাউনি বনাঞ্চলে আইএস শিবিরে এই হামলা হয়। উদ্দেশ্য ছিল সাহেল থেকে আসা সন্ত্রাসীদের হত্যা করা। নাইজেরিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয়ের বলছে, গুয়িনা উপসাগর থেকে এমকিউ-৯ র‌্যাপার ড্রোন ব্যবহার করে জিপিএস-নিয়ন্ত্রিত ১৬ টি নিখুঁত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। এখন প্রশ্ন ওঠে কতটা পরিকল্পিত ছিল এই হামলা।

দীর্ঘদিন ধরে নাইজেরিয়ার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টানদের হত্যার অভিযোগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক হামলার সঙ্গে ধর্ম-বর্ণের কোনো সম্পর্ক নেই বলে আগেই বিবৃতি দিয়েছে নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু দেশটির ধর্মীয় নেতারা বলছেন, এমন অঞ্চলের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হলেন যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। অথচ এই অঞ্চলে কখনোই খ্রিস্টানদের হত্যার ঘটনা ঘটেনি।

ধর্মীয় নেতা শেখ আহমদ গুমি বলেন, সোকোটো রাজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলিম। সোকোটোতে কখনও খ্রিস্টানদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। চার্চে আক্রমণ হয়নি। সোকোটোতে খ্রিস্টানদের ওপর গণহত্যাও চালানো হয়নি। খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি। কারণ, সোকোটোই তাদের হামলার প্রথম লক্ষ্য হয়ে উঠলো।

আর নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের দাবি, বোকো হারাম গহীন জঙ্গলের কোথায় তাদের ঘাঁটি স্থাপন করেছে এ তথ্য চাইলেই বের করা সম্ভব ছিল। অথচ, হামলার স্থান নিয়ে সচেতন ছিল না যুক্তরাষ্ট্র।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক আউয়াল আব্দুল্লাহি বলেন, যদি আইএসের উপর হামলা চালানো হয়, তবে সেটি উত্তরে এবং সাম্বিসা বনাঞ্চলে হওয়া উচিৎ। এমনকি উত্তরে হামলা চালালেও তা কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে বিপদে ফেলা অনুচিত। সাম্বিসা বনেই বোকো হারাম এবং আইএস-ডব্লিউএপি গোষ্ঠীর অবস্থান আছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অবস্থান বের করার দিকে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন ছিল।

গেল নভেম্বরে নাইজেরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে হামলার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন ট্রাম্প। মার্কিন সেনা হত্যার জেরে গেল সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটিতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এখন নাইজেরিয়ার সাম্প্রতিক হামলা কি আইএসবিরোধী অভিযান নাকি অন্যকিছু- সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

ইএ