তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে নবম পে স্কেল; কবে কার্যকর?

নতুন পে স্কেল নিয়ে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় ১৮ লাখ সরকারি চাকরিজীবী
নতুন পে স্কেল নিয়ে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় ১৮ লাখ সরকারি চাকরিজীবী | ছবি: এখন টিভি
0

বাংলাদেশে নতুন বেতন কাঠামো বা নবম পে স্কেল (9th Pay Scale) নিয়ে দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা ও সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজমান ক্ষোভের মাঝেই নতুন মোড় নিয়েছে আন্দোলন। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং বর্তমান রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্বনির্ধারিত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ (Bangladesh Govt Employees Unity Council)।

একনজরে: নবম পে স্কেল ও বর্তমান পরিস্থিতি

  • বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া: নবম পে স্কেল মোট ৩টি ধাপে বাস্তবায়িত হবে।
  • প্রথম ধাপ: আগামী জানুয়ারি ২০২৬-এ কমিশন চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেবে।
  • প্রধান প্রস্তাবসমূহ: বর্তমান ২০টি গ্রেড কমিয়ে ১৩টি গ্রেডে আনা।
  • সর্বনিম্ন বেতন: ৩২,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১,২৮,০০০ টাকা নির্ধারণ।
  • বর্তমান অবস্থা: শহীদ শরিফ ওসমান হাদির স্মরণে ঐক্য পরিষদের কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত।
  • পরবর্তী ঘোষণা: আগামী শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) নতুন আন্দোলনের রূপরেখা জানানো হবে।
  • সরকারকে আল্টিমেটাম: ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশের দাবি, অন্যথায় ১ জানুয়ারি থেকে কঠোর কর্মসূচি।

আরও পড়ুন:

নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে ২৬ ডিসেম্বর আসবে নতুন কর্মসূচি

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনটি জানায়, আগামী শুক্রবার অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর নতুন কর্মসূচি (New Program Announcement) ঘোষণা করা হবে। মূলত শহীদ ওসমান হাদির স্মরণে এদিনের নির্ধারিত আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণার পরিবর্তে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নবম পে স্কেলের গেজেট প্রকাশের দাবি

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা সরকারকে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তাদের দাবি, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পে স্কেলের গেজেট (Pay Scale Gazette Notification) প্রকাশ করতে হবে। যদি ১ জানুয়ারির মধ্যে সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেয়, তবে সারা দেশে কঠোর কর্মসূচি (Strict Protest Program) শুরু করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

পে স্কেল নিয়ে বাড়ছে অস্থিরতা: সর্বনিম্ন ৩২ হাজার টাকা বেতন ও ১৩ গ্রেডের দাবিতে অনড় কর্মচারীরা

সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন জাতীয় বেতন স্কেল (National Pay Scale) বা বেতন কাঠামো নিয়ে দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তায় কর্মচারী ও শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বারবার আশ্বাস এবং কমিশন গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিভিন্ন সংগঠনের কর্মজীবীরা।

তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে নবম পে স্কেল |ছবি: এখন টিভি

পে কমিশনের দীর্ঘসূত্রতা ও অনিশ্চয়তা

সরকার গত বছর একটি জাতীয় বেতন কমিশন (National Pay Commission) গঠন করে এবং জুলাই মাসে ৬ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়। তবে সেই সময় পার হয়ে গেলেও এখনও চূড়ান্ত গেজেট (Final Gazette Notification) প্রকাশ করা হয়নি। এই বিলম্বকে কেন্দ্র করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কর্মক্ষমতা ও আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে।

নবম পে স্কেলে সর্বনিম্ন ৩২ হাজার টাকা ও ১৩ গ্রেডের দাবি

সরকারি কর্মচারীদের প্রধান দাবি হলো বেতন বৈষম্য দূর করা। তারা প্রস্তাব করেছেন:

  • সর্বনিম্ন বেতন: ৩২,০০০ টাকা।
  • সর্বোচ্চ বেতন: ১,২৮,০০০ টাকা।
  • গ্রেড কাঠামো: বর্তমান ২০টি গ্রেড ভেঙে ১৩ গ্রেডের পে স্কেল (13-Grade Pay Scale) প্রবর্তন।

আরও পড়ুন:

নবম পে স্কেল কবে কার্যকর হবে?

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ২০২৬ সালের শুরুতেই অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের (Effective from Jan-April 2026) মধ্যে নতুন পে স্কেল কার্যকর হতে পারে। বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখার কাজও শুরু হয়েছে।

আন্দোলনের মুখে সরকার ও শিক্ষকদের ক্ষোভ

ইতিমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড (10th Grade for Primary Teachers) ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে অনশন এবং ধরণা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এছাড়া সময়-স্কেল (Time Scale) ও সিলেকশন গ্রেড পুনঃপ্রবর্তনের দাবিতে বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনিক বাধার মুখে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে।

টানাটানির মূল কারণগুলো

১. বাস্তবায়নে বিলম্ব: ঘোষণার দীর্ঘসূত্রতা প্রত্যাশা পূরণে বাধা দিচ্ছে।

২. বেতন বৈষম্য: নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের তুলনায় বেতন কম হওয়া।

৩. ভাতা ও পেনশন: পেনশন ও চিকিৎসা ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধার উন্নয়ন না হওয়া।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে এই আর্থিক অনিশ্চয়তা শুধু কর্মচারীদের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করবে না, বরং সামগ্রিক প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।

নবম পে স্কেল আপডেট: ১ জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়নের দাবি, চূড়ান্ত পর্যায়ে পে কমিশন |ছবি : সংগৃহীত

নতুন বেতন কাঠামো যেভাবে বাস্তবায়িত হবে: তিন ধাপে আসছে নবম পে স্কেল

সরকারি চাকুরিজীবীদের বহুল প্রতীক্ষিত নতুন বেতন কাঠামো (New Salary Structure) বাস্তবায়নের রূপরেখা পাওয়া গেছে। জানা গেছে, এবারের নবম পে স্কেল (9th Pay Scale) মোট তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী মাসেই।

জানুয়ারিতে সুপারিশ জমা

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে (First Phase) আগামী জানুয়ারি মাসে জাতীয় বেতন কমিশন তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ জমা (Commission Recommendation Submission) দেবে। এই সুপারিশের ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা হবে বিভিন্ন গ্রেডের বেতন ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি।

নতুন বেতন কাঠামো ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন

সুপারিশ জমা দেওয়ার পর পরবর্তী দুই ধাপে সরকারের উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা এবং চূড়ান্ত বাজেট বরাদ্দ শেষে গেজেট প্রকাশ করা হবে। এই পদ্ধতি অনুসরণের মূল উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ওপর চাপ কমিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে বেতন বৃদ্ধি (Salary Increment) কার্যকর করা।

নতুন বেতন কাঠামো যেভাবে বাস্তবায়িত হবে: তিন ধাপে আসছে নবম পে স্কেল | ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কোন গ্রেডে কত বাড়ছে?

সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামোর খসড়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় বেতন কমিশন। কমিশন গত দশ বছরের ব্যবধানে বেতন ৯০ থেকে ৯৭ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

গ্রেডভিত্তিক প্রস্তাবিত বেতন হলো: গ্রেড-২ এ ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৬ টাকা, গ্রেড-৩ এ ১ লাখ ৯ হাজার ৮৪ টাকা, গ্রেড-৪ এ ৯৬ হাজার ৫৩৪ টাকা, গ্রেড-৫ এ ৮৩ হাজার ২০ টাকা, গ্রেড-৬ এ ৬৮ হাজার ৫৩৯ টাকা, গ্রেড-৭ এ ৫৫ হাজার ৯৯০ টাকা, গ্রেড-৮ এ ৪৪ হাজার ৪০৬ টাকা, গ্রেড-৯ এ ৪২ হাজার ৪৭৫ টাকা ও গ্রেড-১০ এ ৩০ হাজার ৮৯১ টাকা।

নিম্ন গ্রেডগুলোর জন্য প্রস্তাবিত বেতন হলো: গ্রেড-১১ তে ২৪ হাজার ১৩৪ টাকা, গ্রেড-১২ তে ২১ হাজার ৮১৭ টাকা, গ্রেড-১৩ তে ২১ হাজার ২৩৮ টাকা, গ্রেড-১৪ তে ১৯ হাজার ৬৯৩ টাকা, গ্রেড-১৫ তে ১৮ হাজার ৭২৮ টাকা, গ্রেড-১৬ তে ১৭ হাজার ৯৫৫ টাকা, গ্রেড-১৭ তে ১৭ হাজার ৩৭৬ টাকা, গ্রেড-১৮ তে ১৬ হাজার ৯৯০ টাকা, গ্রেড-১৯ তে ১৬ হাজার ৪৪১ টাকা এবং গ্রেড-২০ এ ১৫ হাজার ৯২৮ টাকা।

সরকারি চাকুরিজীবী ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো মনে করছেন, পে স্কেল যদি সঠিকভাবে এবং সময়মতো বাস্তবায়িত না হয়, তবে তা কেবল কর্মজীবীদের আর্থিক নিরাপত্তাই ক্ষুণ্ন করবে না, বরং প্রশাসনিক কর্মক্ষমতা ও সাধারণ জনগণের আস্থাও কমিয়ে দিতে পারে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সাথে সংগতি রেখে একটি সম্মানজনক বেতন কাঠামো নির্ধারণ এখন সময়ের দাবি। এমতাবস্থায়, সরকার ও বেতন কমিশনকে দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করে চলমান অস্থিরতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।



এসআর