সম্প্রতি নগরীর চালিতাতলীতে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে প্রকাশ্যে ঘাড়ে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা আলোচনার সৃষ্টি করেছে গোটা দেশে।
গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে চট্টগ্রামে আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে কয়েকটি গ্রুপ। প্রকাশ্যে গুলি কিংবা অস্ত্র হাতে সদস্যদের নগরী ও জেলায় দেখা মিলে দিন দুপুরে। রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসায়িক স্বার্থ ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে একের পর এক খুন হয় ৩৫ জন। প্রশ্ন উঠেছে কোথা থেকে আসছে এতো অস্ত্র? কারাইবা সরবরাহ করছে? জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে চট্টগ্রামে অস্ত্রের এমন ঝনঝনানি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে সবার।
এলাকাবাসী জানান, রাজনৈতিক কারণেই যে শুধু এসব ঘটনা ঘটছে তা নয়। মাটি কাটা নিয়ে, বালুমহল নিয়ে, আধিপত্য নিয়েও এসব ঘটনা ঘটছে। আরেকজন জানান, পরিস্থিতি এখন আতঙ্কের। মানুষ মনে করছে সামনে হয়তো এসব ঘটনা আরও বাড়বে।
সম্প্রতি রাউজানের নোয়াপাড়ায় একটি বাড়ি থেকে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব। এরপর বিভিন্ন উপজেলার বসতবাড়ি, পুকুর সেচে, খামার ও পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে মাটি খুড়ে অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। রাজনীতিবিদরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে এসব অস্ত্র ব্যবহার হলে পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য খোরশেদুল আলম বলেন, ‘অস্ত্রবাজদের কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। সকল অস্ত্রবাজদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে। আগে থেকেই কেউ যদি অস্ত্রের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং ভীতি প্রদর্শন করে এটা খুবই খারাপ লক্ষণ।’
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘সারাদেশেই এমন অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা নির্বাচনের আগে। যাতে এ পরিস্থিতি বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এখন সরকার যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে পারে তাহলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না।’
পুলিশের তথ্য বলছে, জুলাই অভ্যুত্থানে পর চট্টগ্রাম মহানগরে উদ্ধার করা হয়েছে ৭৯৩টি অস্ত্র আর জেলায় উদ্ধার ৫৭৭টি আগ্নেয়াস্ত্র। আর র্যাব উদ্ধার করেছে দেশি-বিদেশি ২০০টি অস্ত্র। সবমিলে প্রায় দেড় হাজার মারণাস্ত্র উদ্ধার করেছে সংস্থাগুলো।
র্যাব বলছে, বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের সাথে, গণঅভ্যুত্থানের সময় পালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসীদের অস্ত্রও যোগ হয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র প্রবেশ করেছে এমন তথ্যও আছে তাদের কাছে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দুইদিক থেকেই আসে। আগের গুলোও আছে। নতুন দুই চারটা অল্প অল্প করে ইন হচ্ছে। যেভাবেই আসুক আগের থাকুক বা নতুন আসুক সবাই মিলে চেষ্টা করছি। ইন শা আল্লাহ খুব শিগগিরই অস্ত্রের যে একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে এই অস্ত্রবাজি আমরা খুব দ্রুতই বন্ধ করতে পারবো।’
বিদেশি অস্ত্রের চালানের পাশাপাশি দেশি অস্ত্র বিক্রেতার রয়েছে নিদিষ্ট কিছু সিন্ডিকেট। তাই এসব অস্ত্র কারা কিভাবে আনছে এবং সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় কারা দিচ্ছে সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নজরদারি বাড়ানোর দাবি সাধারণ মানুষের।




