উন্নত জীবনের আশায় ভিজিট ভিসা নিয়ে ২ বছর আগে দেশটিতে গিয়েছিলেন শাহিন মাতবর। যাবার কয়েকদিনের মাথায় আটক হন মাফিয়াদের হাতে। মুক্তিপণের জন্য দফায় দফায় চলে নির্যাতন। ভেঙে দেয়া হয় ডান পা। ৪৫ লাখ টাকার বিনিময়ে মুক্তি পেলেও শাহিন এখন হাঁটাচলায় অক্ষম।
শাহিন বলেন, ‘আমার এ পর্যন্ত ৪৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমার পরিবারের কাছে এত টাকা ছিল না। আত্মীয়-স্বজন যে যেভাবে পারছে এমনকি ১০ টাকা পর্যন্ত ভিক্ষা করে আমাকে সাহায্য করেছে।’
মাদারীপুরের কুদ্দুস মোল্লার ছেলে তিন বছর ধরে লিবিয়ায় নিখোঁজ। নিজেও কয়েক দফা সেখানে মাফিয়াদের হাতে আটক হয়েছিলেন। মুক্তিপণ দিয়ে নিজে দেশে ফিরতে পারলেও ছেলের সন্ধান কীভাবে পাবেন-চোখেমুখে এই প্রশ্ন নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হন তিনিও।
আরও পড়ুন:
কুদ্দুস মোল্লা বলেন, ‘আমার ছেলেকে তিন বছর ধরে পাচ্ছি না। আমি মাফিয়াদের কাছে আটক ছিলাম।’
লিবিয়া ফেরত আরেকজন বলেন, ‘প্রথমে বিক্রি করেছে তিউনিশিয়া পরে বিক্রি করেছে আলজেরিয়া। সেখান থেকে লিবিয়াতে তিন বছর জেল খেটে আসলাম।’
শাহিন ও কুদ্দুস মোল্লার মতো শুক্রবার লিবিয়া থেকে ফিরেছেন ৩১০ জন বাংলাদেশি। বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে তাদের ৯ জন শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ। বিমানবন্দরে নিখোঁজ দুই স্বজনের খোঁজে এসেছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আনোয়ার হোসেন। এক বছর ধরে দেশটিতে নিখোঁজ তারা।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দালালে বলেছে নিখোঁজ আছে, একবার বলে আছে, আবার বলে মারা গিয়েছে।’
স্বজনদের দাবি, ভালো কাজের প্রলোভনে লিবিয়ায় নিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপণের জন্য মারধর ও নির্যাতন করে দালাল চক্র। এই টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই।
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে গত তিন মাসে লিবিয়া সরকারের ব্যবস্থাপনায় চারটি ফ্লাইটে লিবিয়া থেকে ফিরেছেন ১ হাজার ২৩৮ জন বাংলাদেশি। আর ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে এই পর্যন্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে ফিরেছেন ৭ হাজার ৮২৯ জন বাংলাদেশি।





