১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সিরিয়ার এক হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গোলান হাইটসের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরাইল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মালভূমিটি ইসরাইলের আত্মসাৎ করা সিরীয় ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হলেও, এলাকাটিতে ইসরাইলের দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে কেবল যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৪৬ সালের পর প্রথম সিরীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখা অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপ্রধান আহমেদ আল-শারা বললেন, গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের দখলদারিত্ব অবৈধ। তাই আব্রাহাম চুক্তিভুক্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে সিরিয়ার অবস্থান ভিন্ন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হয় আব্রাহাম চুক্তি।
আহমেদ আল-শারা বলেন, ‘আমি মনে করি, আব্রাহাম চুক্তিতে যেসব দেশ যোগ দিয়েছে, তাদের তুলনায় সিরিয়ার পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। ইসরাইলের সঙ্গে সিরিয়ার অভিন্ন সীমান্ত আছে এবং ১৯৬৭ সাল থেকে গোলান মালভূমি দখল করে রেখেছে দেশটি। তাই ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় যাওয়ার পরিকল্পনা আমাদের নেই। হয়তো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন প্রশাসনের সহযোগিতায় কখনও এ ধরনের আলোচনা হলেও হতে পারে।’
আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল আহমেদ আল-শারার। কিছুদিন আগে পর্যন্তও তাই সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত এ ব্যক্তির মাথার বিনিময়ে এক কোটি ডলার পুরষ্কারও ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কালের বিবর্তনে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে চিত্র। যুক্তরাষ্ট্রেই বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন শারা।
আরও পড়ুন:
গত সোমবার (১০ নভেম্বর) সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও। ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গতকাল (মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর) শারা জানান, আল-কায়েদার সঙ্গে তার সম্পর্ক এখন অতীত, তাই এ নিয়ে আলোচনার অবকাশ নেই।
আহমেদ আল-শারা বলেন, ‘এটা পুরোপুরি অতীতে চলে যাওয়া একটি বিষয় বলে মনে করি আমি। এ নিয়ে আলোচনা করিনি আমরা।’
সিরিয়ার বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শারার সঙ্গে সুসম্পর্ক চান ট্রাম্প। গেল মে মাসে সৌদি আরব সফরে শারার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প। পরে জুন মাসে সিরিয়ার ওপর থেকে বেশিরভাগ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন ওয়াশিংটন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আড়াই দশকের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে সিরিয়ার দায়িত্ব নেন শারা। এরপর থেকেই ভঙ্গুর দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এ অবস্থায় সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার বিকল্প নেই বলে মত তুরস্কের।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, ‘উত্তর, উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণের পরিস্থিতি ঠিকভাবে সামলানো না গেলে শঙ্কা আছে যে এতে সিরিয়ার সামগ্রিক আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এতে দেশটি আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এ বিষয়টি বোঝা দরকার এবং আমি মনে করি যে তারা বুঝতেও পারছে।’
আসাদ পরবর্তী সময়ে জাতিগত সংঘাতে আলাউইত, বেদুঈন, দ্রুজসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়, পুরোপুরি ভেঙে পড়ে আগে থেকেই গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ভঙ্গুর সহাবস্থান।





