নাইজেরিয়ায় সামরিক অভিযানে পেন্টাগনকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ ট্রাম্পের

ডোনাল্ড ট্রাম্প, পারমাণবিক বোমা
ডোনাল্ড ট্রাম্প, পারমাণবিক বোমা | ছবি: সংগৃহীত
0

আফ্রিকার মুসলিম প্রধান দেশ নাইজেরিয়ায় সামরিক অভিযানের জন্য পেন্টাগনকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার ট্রাম্পের এই বার্তার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিস্টানদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত ওয়াশিংটন। তবে প্রশ্ন উঠছে, রক্ষণশীল খ্রিস্টানদের সমর্থন আদায় নাকি নাইজেরিয়ার তেলের ভাণ্ডার দখল- কোন উদ্দেশে নাইজেরিয়ার সামরিক অভিযান চালাতে চান ট্রাম্প?

আড়াইশোর বেশি নৃগোষ্ঠীর বাস হলেও পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার প্রায় অর্ধেক জনগণ মুসলমান। যাদের বসবাস দেশের উত্তরে। বিপরীতে বিশ্বের ৭ম সর্বোচ্চ জনবহুল এই রাষ্ট্রটির ৪০ শতাংশ খ্রিস্টান, যাদের বসতি দক্ষিণ প্রান্তে।

তবে দীর্ঘদিন ধরে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় বোকো হারাম গ্রুপের সহিংসতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। সঙ্গে যোগ হয়েছে কৃষিজমি ও পানি বণ্টন নিয়ে খ্রিস্টান কৃষক ও মুসলিম চারণকারীদের বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা। যদিও এই বিবাদকে ধর্মভিত্তিক কোন্দল হিসেবে মানতে রাজি নয় নাইজেরিয়ার সরকার।

দ্বিতীয় মেয়াদে, ক্ষমতা নেয়ার পর রক্ষণশীল খ্রিস্টানদের সমর্থন আদায়ে মনোযোগী হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। খ্রিস্টান বিরোধী পক্ষপাত দূর করতে গেল ফেব্রুয়ারিতে গঠন করেছেন টাস্ক ফোর্সও। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ানোর পাশাপাশি কোনো শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান আঞ্চলিক সংঘাতে নিহত হলে একে গণহত্যা বলেও আখ্যা দিচ্ছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুন:

এমন প্রেক্ষাপটে গেল শুক্রবার আফ্রিকার খনিজ তেলের ভাণ্ডার খ্যাত নাইজেরিয়াকে বিশেষ উদ্বেগের দেশ হিসেবে মনোনীত করার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। বলেন সেখানে নিহত খ্রিস্টানদের হত্যার পেছনে জড়িয়ে আছে র‌্যাডিকাল মুসলিম জনগোষ্ঠী। এর একদিন পরে আবারও পোস্ট দেন ট্রুথ সোশ্যালে। জানান, নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য পেন্টাগনকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্পের এমন নির্দেশের পর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্স বার্তায় জানান, নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের ওপর চলমান সহিংসতা এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন। আর জন্য প্রস্তুত আছে ট্রাম্প প্রশাসনের নয়া দপ্তর, ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার।

যদিও শনিবারই নাইজেরিয়ার সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে তারা। পাশাপাশি ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিত্রতাই বজার রাখতে চায় নাইজেরিয়া। যদিও তা আমলে নেয়নি ওয়াশিংটন।

তবে প্রশ্ন উঠছে খ্রিস্টানদের জন্য ট্রাম্পের এমন যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণ কী। বিপুল জনসংখ্যা ছাড়াও বিশ্ববাজারে খনিজ তেলের একটি বড় অংশের জোগান আসে নাইজেরিয়া থেকে, যা দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তিও বটে। নাইজেরিয়ার দক্ষিণ অংশে, বিশেষত নাইজার নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে, খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সমৃদ্ধ মজুত রয়েছে, যা আগামী বহু দশক ধরে ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট। ফলে রক্ষণশীল খ্রিস্টানদের সমর্থন আদায় ছাড়াও আফ্রিকার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে সামরিক অভিযান চালানোর পেছনে ট্রাম্পের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে কী না এমন প্রশ্ন তুলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

ইএ