অক্টোবর মাস শুরু না হতেই ডেঙ্গুতে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত ৫ অক্টোবর ডেঙ্গুতে একদিনে ৯ জনের মৃত্যু হয়। এটা চলতি মৌসুমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর প্রতিদিনই গড়ে ২ থেকে ৩ জনের প্রাণহানি ঘটছেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে ৯ জনের ৭জনই হাসপাতালে ভর্তির দিনই মারা গেছেন।
চলতি বছর ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ভর্তি প্রায় আড়াই হাজার ডেঙ্গু রোগীর সেবা দিয়েছে ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল। অথচ এখানে মারা গেছেন মাত্র ৬ জন। এদের বেশিরভাগকেই খুব খারাপ অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে দাবি হাসপাতালটির পরিচালকের।
ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড ১৯ হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এখানে যারা মারা গিয়েছে তারা আসার ১ থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই মারা গিয়েছে।’
আরও পড়ুন:
১০ অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্ত ৫২ হাজার আক্রান্তের বিপরীতে প্রাণ ঝরেছে ২২০ জনের। সবচেয়ে হতাশার খবর হলো আক্রান্তের দিক থেকে সপ্তম হলেও বিশ্বে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার সর্বোচ্চ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্য বিশ্বের ১৭৫টি দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার ০.৫২ শতাংশ। আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যার শীর্ষে ব্রাজিল থাকলেও মৃত্যুহার ০.১২ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ার মৃত্যু হার ০.৪১ শতাংশ। এরপরেই আক্রান্তের দিক থেকে সপ্তম অবস্থানে থাকার পরও মৃত্যু হারে শীর্ষে বাংলাদেশ। মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে জনগণের অবহেলাকে সামনে আনছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের দায় তখনই আসবে যখন রোগী হাসপাতালে আসে। আর দেরি করে আসলে এইটাতো উদাসীনতা বলবো না এটাকে অবহেলা বলা যেতে পারে।’
যদিও চলতি বছর অন্যান্য বছরের মত নিয়মিত জরিপ চালাতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত দিনের মতই ডেঙ্গুর পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে। ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ ও চিকিৎসা সেবা বড় শহর কেন্দ্রিক হওয়ায় মৃত্যু হার কমছে না বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘চিকিৎসা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে বিশেষ করে শহর এলাকায়। শহর এলাকায় সবাই ছুটে আসে। এখানে যদি প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, মাধ্যমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও বড় হাসপাতাল করে সাজাতে পারি তাহলে এই মৃত্যু হার কমে আসবে।’
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলছেন, এখন জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হবার পর তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে ছুটতে যেয়েই এত প্রাণহানি ঘটছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।





