২০২২ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় তিন হাজার কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি এখনও পুষিয়ে উঠতে পারেনি পাকিস্তান। চলতি বছরের বন্যার পরিধি সে তুলনায় কম হলেও ক্ষত কম নয়।
২৬ জুন থেকে তিন মাসে প্রায় ১ হাজার মানুষের মৃত্যু শুধু নয়, রিজার্ভ বৃদ্ধি আর সুদহার কমার সুখবর সত্ত্বেও বন্যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। কমেছে সরবরাহ, বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। গম, চিনি, টমেটোর দাম বাড়ছেই।
জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে মৌসুমের রেকর্ড বৃষ্টির কবলে পাকিস্তান। খাইবার পাখতুনখোয়াসহ উত্তরের প্রদেশগুলোতে মুষলধারে বৃষ্টিতে দেখা দেয় তীব্র বন্যা পরিস্থিতি। আগস্টের শেষে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, বিশেষ করে পাকিস্তানে চাল, তুলা আর ভুট্টার দুই-তৃতীয়াংশের ফলন হয় যেখানে, সেই পাঞ্জাব প্রদেশে। উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় ডুবে যায় সিন্ধু প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলও। এসবের মধ্যেই অস্বাভাবিক ভারী বৃষ্টিপাতের কবলে পড়ায় ভারতও বাঁধের পানি ছাড়তে শুরু করলে আরও জটিল হয় পরিস্থিতি।
স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘বন্যার পানি নামছেই না। পানিতে তলিয়ে আছি। ভীষণ দুর্ভোগে আছি। আমাদের তুলার ফলন ধ্বংস হয়ে গেছে।’
অন্য আরেকজন ব্যক্তি বলেন, ‘ফসলের বছরে এক লাখ ৬২ হাজার রুপি ব্যয় করেছি। চারশো একর জমিতে তুলা চাষ করেছি। মাত্র ৯০ একরের তুলা আছে। বাকি ৩১০ একর বন্যায় শেষ হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন:
এ অবস্থায় ভয়াবহ সংকটে পাকিস্তানের কৃষক ও কৃষিখাত। শুধু পাঞ্জাবে ১৮ লাখ একর আবাদি জমি নষ্ট হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রাদেশিক সরকার। বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের দাবি, পাকিস্তানি মুদ্রায় দেশটির কৃষিখাতে এ বছর বর্ষায় ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ কোটি রুপি বা ৩৫৩ কোটি ডলার।
পাকিস্তান কিষাণ ইতিহাদ চেয়ারম্যান খালিদ হুসাইন বাথ বলেন, ‘বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের ফলে যাওয়া ফসল নষ্ট হয়েছে। এ সময়ে, প্রায় ৪০ লাখ একর জমি ক্ষতির শিকার, বিশেষ করে আমাদের ধান, ভুট্টা, তুলা আর তেলবীজ জাতীয় ফসল। আমাদের নদীতীরবর্তী এলাকার সমস্ত শাকসবজিও নষ্ট হয়ে গেছে।’
আইএমএফের অধীনে কৃষি ও শিল্প খাত নিয়ে অনেক বছরের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু দেশের প্রধান কৃষি অঞ্চল এবং কয়েক দশকে প্রথমবার শিল্পাঞ্চলগুলো তলিয়ে যাওয়ায় এ বছর চার শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য থেকে অনেকটাই পিছিয়ে গেছে দেশটি। স্যাটেলাইট তথ্য বলছে, বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব পড়বে খাদ্যপণ্যের যোগান আর রপ্তানিতেও।
পাকিস্তান পরিকল্পনা মন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেন, ‘বন্যায় নিশ্চিতভাবেই আমরা অনেকটা পিছিয়ে যাবো। কিন্তু কোন মাত্রায় এ পিছিয়ে যাওয়া, সেটা তো আসলে সঠিক তথ্য হাতে আসলেই শুধু জানা সম্ভব।’
অর্থনীতিবিদ, কৃষিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছরের অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়িয়ে যেতে পারে ২০২২ সালকেও। সে বছর পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ ডুবে গেলেও এ বছর বন্যার ধাক্কা লেগেছে গ্রাম ও নগরাঞ্চল সবখানে। শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তুলার ঘাটতি দেশে বৈদেশিক রাজস্বের সবচেয়ে বড় উৎস বস্ত্র শিল্পকে নিয়ে যেতে পারে খাদের কিনারায়। চাল রপ্তানিকারকদের শঙ্কা, দাম বাড়তে থাকায় ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন তারা।





