প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে কী হয়?
হজমের সমস্যা কমায়: পেকটিন প্রিবায়োটিকের মতো কাজ করে, হজম ঠিক রাখে।
হৃদরোগ ঝুঁকি কমায়: কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: আপেলে প্রচুর ফাইবার ও পানি থাকে, যা পেট ভরে রাখে এবং ক্ষুধা কমায়।
দাঁতের যত্ন: ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে দাঁত শক্ত ও মজবুত রাখে।
ক্যানসার প্রতিরোধ: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: পেকটিন ইনসুলিন ও রক্তের শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: কুয়েরসেটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে।
ত্বক ভালো রাখে: মুখের ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ থাকে।
নিয়মিত আপেল খাওয়া সুস্থ জীবনযাপনের জন্য উপকারী। তবে আপেলের বীজ না খাওয়া ভালো, কারণ এতে ক্ষতিকর সায়ানাইড থাকে।
খালি পেটে আপেল খেলে কী হয়
আপেল সুস্বাদু হলেও এটি অম্লীয়। পিএইচ মাত্রা প্রায় ৩.৫, যা কলা ও আঙুরের তুলনায় বেশি অ্যাসিডিক। তাই অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে খালি পেটে আপেল খাওয়া এড়িয়ে চলুন এবং খাবারের অন্তত দুই ঘণ্টা পর খান।
আরও পড়ুন:
- দুধ, দই, পনির বা মাখনের সঙ্গে আপেল মিশিয়ে খাবেন না, কারণ এটি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে।
- খোসা ছাড়িয়ে খান বা ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- বাচ্চাদের জন্য আপেল কেটে এক চিমটি লবণ দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন, যাতে বাদামি না হয়।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় কাঁচা নয়, সেদ্ধ আপেল খান।
- আপেল মিল্কশেক অস্বাস্থ্যকর হতে পারে, অন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।
ভরা পেটে ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম
ফল খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী হলেও কিছু ভুল অভ্যাসের কারণে তা উল্টো ক্ষতি করতে পারে।
- ফল খাওয়ার পরপরই পানি পান করবেন না। এতে হজমে সমস্যা, মাথা ব্যথা বা বমি বমি ভাব হতে পারে।
- কেটে রাখা ফল বিকেলে খাবেন না। এতে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। গোটা ফল খাওয়াই ভালো।
- জুসের বদলে ফল চিবিয়ে খান। শুধু লেবুজাতীয় ফলের রস খাওয়া যায়।
- রাতের খাবারের সঙ্গে ফল নয়। ভারী খাবারের আধ ঘণ্টা আগে বা পরে ফল খাওয়া শ্রেয়।
- ভালো করে পাকা ফল খান, কাঁচা-পাকা বা ফ্রোজেন ফল এড়িয়ে চলুন।
গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থা নারীর জীবনের বিশেষ সময়। এই সময়ে প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়ার মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ: আয়রন সমৃদ্ধ আপেল হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বাড়ায়।
- হজমে সহায়তা: খাদ্যতন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ভিটামিন সি সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
- শক্তি সরবরাহ: প্রাকৃতিক শর্করা তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়।
- হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য: কোলেস্টেরল কমায় ও ধমনি সুরক্ষা করে।
- শ্বাসকষ্ট কমায়: অ্যাজমা ও হাঁপানি ঝুঁকি হ্রাস করে।
- হাড়ের বিকাশ: ক্যালসিয়াম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- স্মৃতিশক্তি: কোয়ারসেটিন মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
আপেলের সঠিক পরিমাণ গ্রহণ করে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব।
বাচ্চাদের জন্য আপেলের উপকারিতা
শিশুর সুস্থতায় আপেল হতে পারে দারুণ সহায়ক ফল। এতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহের প্রদাহ কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- আপেল শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি সরবরাহ করে, যা অনাক্রম্যতা শক্তিশালী করে।
- ছয় মাস বয়সী শিশুদের জন্য আপেলের মন্ড বা পিউরি সহজলভ্য এবং উপকারী।
- এটি হজমে সাহায্য করে এবং অন্যান্য শক্ত খাবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করে।
আপেল খাওয়ার সঠিক সময় ও উপকারিতা
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, প্রতিটি ফলের একটি নির্দিষ্ট খাওয়ার সময় আছে। আপেল খাওয়ার সঠিক সময় হলো সকাল বেলা।
- সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আপেল খেলে হজম সুষ্ঠু থাকে।
- খোসা ও পেকটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায় এবং টক্সিন কমে।
- পেকটিন কোলনের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও ক্যান্সার ঝুঁকি কমায়।
- বিকেল বা রাতে আপেল খেলে হজমে সমস্যা ও গ্যাস তৈরি হতে পারে।
- সকালের আপেল ও দুপুরের খাবারের আগে নাস্তা হিসেবে খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ, ত্বক ভালো রাখা এবং শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
লাল নাকি সবুজ; কোন আপেল বেশি উপকারী
বাজারে পাওয়া যায় লাল ও সবুজ আপেল। লাল আপেল মিষ্টি ও রসালো হলেও সবুজ আপেল টকস্বাদী এবং খোসা কিছুটা শক্ত। পুষ্টিবিদদের মতে, দু’ধরনের আপেলের মধ্যেই সামান্য পার্থক্য রয়েছে।
- সবুজ আপেল: ভিটামিন এ, বি, সি, ই ও কে, আয়রন, পটাশিয়াম ও প্রোটিনে সমৃদ্ধ। ওজন কমাতে কার্যকরী এবং চিনি কম গ্রহণ করতে চাইলে সবুজ আপেল উপকারী।
- লাল আপেল: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
দীর্ঘমেয়াদে উভয় আপেল শরীরে সমান প্রভাব ফেলে। তবে সবুজ আপেলের ভিটামিন এ চোখ, ত্বক ও হাড়ের জন্য বেশি উপকারী।
আপেল নাকি আপেল জুস—কোনটি বেশি উপকারী
আপেল খাওয়া শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হলেও জুস আকারে খাওয়ার তুলনায় পুরো আপেল খাওয়াই সর্বোত্তম।
- আপেলে থাকা আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ায় ও রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।
- প্রতিদিন একটি লাল বা সবুজ আপেল খেলে ইমিউনিটি শক্তিশালী হয় এবং রোগের ঝুঁকি কমে।
- আপেলের খোসায় থাকা প্রোটিন ও এনজাইম হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
- জুস খেলে রক্তে শর্করা দ্রুত বেড়ে যায়, যা যকৃতে চাপ সৃষ্টি করে। পুরো আপেল খেলে এ সমস্যা হয় না এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা দ্বিগুণ মেলে।





