পৃথিবীতে গ্রহাণুর আঘাতের শঙ্কা, যৌথ গবেষণায় ব্যস্ত নাসা-ইসা

0

গেল বছর আবিষ্কার করা একটি গ্রহাণু নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্তত ২ শতাংশ আশঙ্কা আছে, এই গ্রহাণু আঘাত হানতে পারে পৃথিবীতে। আপাতত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাসা আর ইউরোপের ইসা গবেষণা করছে, গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানার শঙ্কা থাকলে করণীয় কী।

পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে এটি। নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এখন এই গ্রহাণুর আকার আর কক্ষপথ নিয়ে গবেষণা করছে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখছেন, এই গ্রহাণুর পৃথিবীতে আঘাত করার শঙ্কা আসলে কতটা।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্ল্যানেটারি ডিফেন্স অফিস জুয়ান লুইস ক্যানো বলেন, ‘নাসা আর ইসা মিলে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সহযোগিতায় দেখার চেষ্টা করছি কি হবে। মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ এই গ্রহাণু নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে পারবো। এই গ্রহাণুর আকার নিয়ে সঠিক ধারণা পাওয়া খুব প্রয়োজন। টেলিস্কোপ দিয়ে এই কাজ করা খুব কঠিন। ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ ব্যবহার করলে কাজে সুবিধা হবে।’

২০২১ সালের ডিসেম্বরে মহাকাশে পাঠানো হয় জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। এই স্যাটেলাইট কাজ করছে ছায়াপথ, পুরো গ্রহমণ্ডলের উৎপত্তি নিয়ে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রথম এই গ্রহাণু আবিষ্কার করা হয়। সেসময় বলা হয়েছিলো, ২০৩২ সালের ডিসেম্বরে এই গ্রহাণু পৃথিবীকে অতিক্রম করবে কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া। কিন্তু গ্রহাণুটি প্রায় ৩০০ ফিট লম্বা আর শব্দের চেয়ে ১৫ গুণ দ্রুতগতিতে ছোটায় এর গতিপথ নিয়ে কিছুটা সংশয়ে পড়ে গেছেন বিজ্ঞানীরা।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্ল্যানেটারি ডিফেন্স অফিস জুয়ান লুইস ক্যানো বলেন, ‘জানুয়ারি নাগাদ জানতে পেরেছি, ২ শতাংশ আশঙ্কা রয়েছে এই গ্রহাণুর পৃথিবীতে আঘাত হানার। এই গ্রহাণুর গতিপথ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত এই গ্রহাণুর পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাবনা কম থাকলেও ভবিষ্যতে বাড়বে কিনা, তা বলা মুশকিল। পৃথিবীর কক্ষপথ অনুযায়ী বাড়তে পারে আঘাত হানার আশঙ্কা।’

আপাতত মহাকাশ বিজ্ঞানীরা জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ব্যবহার করে পরিমাপ করবে, কী পরিমাণ আলো এই গ্রহাণু নিঃসরণ করে। গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আরও নিশ্চিত ধারণা দেবে এই গ্রহাণু আদৌ পৃথিবীতে আঘাত করবে কিনা। গতিপথ পরিবর্তন করলেও এই গ্রহাণু যেন পৃথিবীতে আঘাত না করতে পারে, তা নিশ্চিত করার সম্ভাবনাও ৯০ শতাংশ। যদি ১ শতাংশ শঙ্কাও থাকে পৃথিবীকে আঘাত করার, সেক্ষেত্রে কোন মহাকাশযান বিধ্বস্ত করে দেয়া হবে এই গ্রহাণুর ওপর, যেন এর গতিপথ বদলে যায়।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্ল্যানেটারি ডিফেন্স অফিস জুয়ান লুইস ক্যানো বলেন, ‘এপ্রিল আর মে মাসের মধ্যে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে তথ্য পেয়ে যাবো। ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সম্ভাবনা নেই এই গ্রহাণুর পৃথিবীকে আঘাত হানার। আবার এই গ্রহাণুকে কক্ষপথ থেকে বিচ্যুতও করতে পারবো। ১০টা ঘটনার মধ্যে ৯টা এমন থাকে। মে পর্যন্ত এটি কার্যতালিকায় থাকবে। ২০২৮ সালে আরেকবার বুঝতে পারবো, এটি পৃথিবীতে আঘাত হানবে কিনা।’

৮ বছর পর যদি পৃথিবীকে সত্যি এই গ্রহাণু আঘাত করে বসে, তবে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। ১৯০৮ সালে সাইবেরিয়ার ওপর একটি গ্রহাণু আছড়ে পড়ে। সেসময় ২ হাজার ১৫০ স্কয়ার কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত ৮ কোটি গাছ শেষ হয়ে যায়। এই ঘটনাকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গ্রহাণুর প্রভাব হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এএম