তেল আবিবের কাছে বৃহস্পতিবার তিনটি বাসে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে কেউ হতাহত না হলেও নব্বইয়ের দশকে ফিলিস্তিনি বিপ্লবের সময় জেরুজালেমে বাসে আত্মঘাতী হামলার রক্তক্ষয়ী অতীত মনে করেই সতর্ক ইসরাইল সরকার। এমন পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরে শুক্রবারই তিনটি অতিরিক্ত ব্যাটেলিয়ন মোতায়েন করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।
তবে এখানেই শেষ নয়। ২০০২ সালে বিভিন্ন ফিলিস্তিনি শহরে বড় পরিসরে সামরিক অভিযান- 'অপারেশন ডিফেন্সিভ শিল্ড' পরিচালনার সময় প্রথমবার পশ্চিম তীরে ট্যাংক মোতায়েন করেছিল ইসরাইল। ২০০৫ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শেষে ট্যাংক প্রত্যাহারের ২০ বছর পর রোববার ফের অঞ্চলটিতে সাঁজোয়া ট্যাংক পাঠায় সেনাবাহিনী। এর মাধ্যমে পুরো পশ্চিম তীরে সামরিক অভিযান জোরদারের শঙ্কা সত্যি প্রমাণ করলো ইসরাইল; নিশ্চিত করেছে অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরের অন্যতম সংঘাতপূর্ণ জেনিনের কাছে কয়েকটি গ্রামে অভিযানের খবরও।
গাজায় যুদ্ধের ১৫ মাসে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনা ও দখলদারদের হামলায় প্রাণ গেছে ৯শ'র বেশি ফিলিস্তিনির, আহত হয়েছে আরও প্রায় সাত হাজার মানুষ। গেল জানুয়ারিতে উপত্যকায় অস্ত্রবিরতি কার্যকরের সময় থেকেই পশ্চিম তীরে নজর সরায় যুদ্ধবাজ ইসরাইল। পশ্চিম তীরের উত্তরে সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে এ পর্যন্ত প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক মানুষের। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নাম দেয়া হলেও পশ্চিম তীরের বাড়িঘর, স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে অন্তত ৪০ হাজার বাসিন্দাকে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে। জেনিনের পাশাপাশি তুলকার্ম আর নূর আল-শামসেও চলছে সেনাবাহিনীর উচ্ছেদ অভিযান।
উচ্ছেদ অভিযানের শিকার একজন বলেন, ‘নিজেদের বাড়ি গুঁড়িয়ে যেতে দেখছি আমি। তুলকার্মের অন্যতম পুরোনো বাড়ি ছিল এটি। হঠাৎ পৃথিবীর বুক থেকে বাড়িটির অস্তিত্ব মুছে দেয়া হলো, এ বাড়ির সব স্মৃতি মুছে দেয়া হলো।’
আরেকজন বলেন, ‘২৩ দিন আগে বাড়ি ছেড়েছি। জানি না কী ঘটছে সেখানে? আমাদের বাড়ি ভেঙে দেয়া হয়েছে? নাকি এখনও বাড়িটা আছে? ভেতরের সবকিছু চুরি করে নিয়ে গেছে? কিছুই জানি না।’
গেল বছর জুলাইয়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের কয়েক দশকের অবরোধ অবৈধ ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত আইসিজে। একইসঙ্গে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে সকল দখলদারদের সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানায়। আদালতের এ নির্দেশনা উপেক্ষা করেই দখলকৃত অঞ্চলে সেনা অভিযানের পরিধি ফের বাড়িয়েছে নেতানিয়াহু সরকার।