৮ মাস পর পৃথিবীতে ফিরছেন দুই নভোচারী

বিদেশে এখন
0

৮ মাস ধরে মহাকাশে আটকা পড়া দুই নভোচারীকে আগামী ১৯ মার্চের মধ্যে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে নাসা। যদিও ধনকুবের ইলন মাস্ক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্পেসএক্সের নভোযানের সাহায্যেই উদ্ধার করা হবে ঐ দুই নভোচারীকে। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরকে ফিরিয়ে আনতে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে নাসার একটি ইউনিট। এদিকে, মহাকাশে ভ্রমণের সময় নভোচারীদের শারীরিক সক্ষমতা যাতে অটুট থাকে সেজন্য অভিনব এক উপায় আবিষ্কার করেছে একদল ইঁদুর গবেষক।

সম্প্রতি ফক্স নিউজের একটি অনুষ্ঠানে স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের ইলন মাস্ক দাবি করেন, রাজনৈতিক কারণে মহাকাশে আটকে পড়া দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনতে দেরি হচ্ছে। স্পেসএক্সের পক্ষ থেকে তৎকালীন বাইডেন প্রশাসনকে এই প্রস্তাব দেয়া হলেও সেটি আমলে নেয়া হয়নি।

যদিও ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, স্পেসএক্স নয়, নাসার নিজস্ব অভিযানের মধ্য দিয়েই পৃথিবীতে ফিরতে যাচ্ছেন ৮ মাস ধরে মহাকাশে আটকে পড়া দুই নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর।

ইন্ডিয়া টু ডে, দ্য নাগপুর লাইভসহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নভোযানে আটকে পড়া এই দুই নভোচারীকে উদ্ধারে ক্রু-টেন নামের একটি মিশন ঘোষণা করেছে নাসা। মার্চের ১২ তারিখ অনুষ্ঠিতব্য এই অভিযানে নাসার দুই নভোচারী এনি ম্যাকক্লেইন ও নিকোল আইরেসের সাথে যোগ দেবেন জাপানের এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির আরেক নভোচারী। ৬ মাসের এই অভিযানের শুরুতে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে পাড়ি দেবেন তারা।

বর্তমানে ঐ স্পেস স্টেশনের কমান্ডারের দায়িত্বে আছেন আটকে পড়া নভোচারীদের একজন, সুনিতা ইউনিয়ামস। কমান্ড হস্তান্তর হতে সময় লাগবে অন্তত ৭ দিন। এরপর মার্চের ১৯ তারিখ, ক্রু-টেনের ড্রাগন স্পেসক্রাফটে চড়ে পৃথিবীতে ফিরবেন সুনিতা ও বুচ। বাকিরা থেকে যাবেন মিশনের জন্য।

ট্রাম্প প্রশাসনের উপদেষ্টা ইলন মাস্কের ভাষ্য মতে, ঐ দুই নভোচারীকে ইচ্ছা করেই মহাকাশে ফেলে রাখা হয়েছে। যদিও ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, সুনিতা বা বুচের কেউই এই অভিযোগের সাথে সম্মত নন। ২০২৪ সালের ৫ জুন বোয়িংয়ের স্টারলাইনারে চড়ে মহাকাশে পাড়ি জমান সুনিতা ও বুচ। এটাই ছিল মহাকাশচারী নিয়ে বোয়িংয়ের প্রথম মহাকাশ যাত্রা। ২১ দিন পরে ফেরার কথা থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পৃথিবীর নিকটবর্তী কক্ষপথে গেল ৮ মাস ধরে আটকা পড়েন ঐ দুই নভোচারী।

এদিকে, দুই নভোচারী মহাকাশে আটকা পড়ার পর বারবার আলোচনায় এসেছে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রসঙ্গ। এবার এ নিয়ে অদ্ভুত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন একদল মার্কিন গবেষক। তবে নভোচারীর বদলে ল্যাবরেটরিতে ঢোকানো হয়েছে কয়েকটি ইঁদুর।

মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টান খুব কম থাকার কারণে পেশি ও হাড়ের ঘনত্ব দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করে। এর প্রভাব পড়ে মানুষের পিঠ, ঘাড়, ঊরু ও পায়ের হাঁটুর নিচের পেশিতেও। মাইক্রোগ্র্যাভিটি সংক্রান্ত এনপিজে জার্নালে বলা হচ্ছে, নভোচারীরা যদি ট্রেড মিলে দৌড়ানোর বদলে লাফ দেয়ার এক্সারসাইজ করেন, তাদের স্বাস্থ্য কম ঝুঁকিতে পড়বে। গবেষণাগারের বিশেষ চেম্বারে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নিয়ন্ত্রণের পর কয়েকটি ইঁদুর নিয়ে পরীক্ষা শেষে এই গবেষণা প্রতিবেদন হাজির করে মার্কিন ঐ দলটি।

জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ডা. মার্কো সিবার্জ বলেন, ‘লাফ দেয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো একটি ব্যায়াম। হৃদরোগের সুস্থতা, হাড়ের স্বাস্থ্যরক্ষা, পেশিশক্তি বৃদ্ধিতে এটি খুবই উপকারী। নভোযানে এমন অনেক যন্ত্রপাতি আছে যা ব্যবহার করে নভোচারীরা লাফানোর সুযোগ পাবেন। হাড়ের ক্ষয় রোধে এই ধরনের ব্যায়াম যে কাজে আসতে পারে, এটা কেউ আগে ভাবেনি। আমরা এ বিষয়েই কাজ করছি।’

নভোচারীদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি ভবিষ্যতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষণা দলটি। এতে করে মহাকাশ যাত্রায় ভোগান্তি অনেকটাই কমানো সম্ভব- এমন আশাবাদও জানিয়েছেন তারা।

ইএ