হেমন্তের ক্যানভাসে আঁকা শীতল ভোরে মাঠজুড়ে চলছে পরিশ্রমী কৃষকের বপন-বুননের সাজসজ্জা। খাদ্য পুষ্টি নিশ্চিত ও উত্তরাঞ্চলকে শস্যের ভাণ্ডার করে তুলতে বেলা-অবেলায় চলে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি।
জেলা কৃষি ঋণ পর্যবেক্ষণ কমিটির তথ্য বলছে, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকসহ রাষ্ট্রদূত ৪৯টি ব্যাংক ঋণসহায়তা দিচ্ছে কৃষককে। রাজশাহী জেলায় কৃষি ঋণে ৮৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দের এ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে ২৬ শতাংশ। যার মধ্যে শুধু শস্য খাতেই ১৪ শতাংশ। তবে কৃষিঋণ প্রাপ্তি নিয়ে মাঠের কৃষক বলছে ভিন্ন অভিজ্ঞতার গল্প।
কৃষকদের একজন বলেন, ‘ঋণ নেয়ার সময় ভিন্ন কিছু চায় জামানত হিসেবে। জমির দলিল দিতে হয়। সহজে ঋণ পাওয়া যায় না।’
আরেকজন বলেন, ‘সরকারি যে ঋণ রয়েছে সেগুলো সাধারণ কৃষকরা পায় না। এনজিও ঋণ আমরা পাই।’
খাদ্যে স্বনির্ভর রাজশাহী জেলার ৪লাখ ৪৫ হাজার আবাদি জমি থেকে প্রতিবছর উদ্বৃত্ত থাকছে ৪ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য। এ অর্জনে নতুন ফসলের উৎপাদনে ঋণ কর্জের প্রয়োজন পড়ছে কৃষকের।
এ অবস্থায় কৃষকের চাহিদায় গেল বছরের চেয়ে মৌসুমি চাষ, তৈলবীজ ও শস্যে ঋণবিতরণ লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক মহববত আলী বিশ্বাস বলেন, ‘২০২২-২৩ অর্থবছরে আমাদের কৃষি ঋণ বাজেট ছিল ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। যেখানে আমরা ১২০ শতাংশ অর্জন করি। যার আমাদের একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা থাকে।’
আর উৎপাদন বাড়াতে কৃষি ঋণে বরাদ্দের অর্থ, সঠিক কৃষকের হাতে ঋণ তুলে দিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলছে, জেলা কৃষিঋণ পর্যবেক্ষণ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক।
জেলা কৃষি ঋণ পর্যবেক্ষণ কমিটির জেলা প্রশাসক ও সভাপতি আফিয়া আখতার বলেন, ‘কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি যাতে ১০০ শতাংশ ঋণ সঠিক কৃষকের হাতে দিতে পারি। তারা যেন সহজ শর্তে ঋণ পেতে পারে।’
এ ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক হিসাব, বর্গাচাষিদের ঋণ ও ঋণ ফরম সহজ করা হয়েছে।
কৃষিঋণ বিতরণে রাজশাহীর ৪৯ টি ব্যাংক গেল সেপ্টেম্বরে নিজেদের বরাদ্দের সর্বনিম্ন ১৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে সক্ষম হয়েছে।
রাজশাহীতে ১৯৭২টি গ্রামের অশ্রেণিভুক্ত এবং ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজারের বেশি। প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও কৃষি ঋণের শর্তের বাধাধরা নিয়মে ঋণ বঞ্চিত হচ্ছে প্রান্তিক শ্রেণির ৯০ ভাগ কৃষক। বাধ্য হয়ে কৃষককে পাঁচগুণ বেশি সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। কৃষক বলছে যার প্রভাব পড়ছে কৃষির উৎপাদন বিপণন এবং পণ্যের বাজার মূল্যে।