২৫ হাজার কোটি টাকার ই-কমার্স খাতের সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগে ২০২১ সালে। নানা রকম অফারে গ্রাহকদের অর্থ বেহাত হয় ইভ্যালি, ই-ওরেঞ্জ, কিউকমের মতো বড় কোম্পানি থেকে। যার আর্থিক পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মামলা, অর্থ ফেরত নানা উপায়েও পাঁচ বছর শেষ হলেও এখনও গ্রাহকের পাওনা ১৪৪ কোটি টাকা ১৮ টি প্রতিষ্ঠানের কাছে। আর ২০২১ সাল থেকে পেমেন্ট গেটওয়েতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তত ১২৭ কোটি টাকা আটকে আছে।
এখন টিভির প্রিতিনিধি দল কথা বলে একজন ক্রেতার সাথে। যার দেড় কোটি টাকা ই-কমার্সের বিনিয়োগ রয়েছে। টাকা উদ্ধারে আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরেও মেলেনি হারানো অর্থ। আরেক ভুক্তভোগী জানান, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও দোষীরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগের তীরও ছোঁড়েন পেমেন্ট গেটওয়ের প্রতিষ্ঠানের দিকে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন বলেন, 'কারা সমাধান দেবে? মালিক পক্ষে সমাধান দিবে না কি সরকার পক্ষ সমাধান দিবে। এটা নিয়ে আসলে আমরা এখনও দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছি। কার্যত এসব রিফান্ডের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ ছত্রছায়ায় কোনো রাজনৈতিক দলের দোহায় দিয়ে এসব না করে তারা গ্রাহকদের নিয়ে কাজ করুক।'
অন্য একজন ভুক্তভোগী বলেন, 'ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সমভাবে দায়ী। এসএসএল কমার্সের তিনজন কর্মকর্তা মানি লন্ডারিংয়ের চার্জশিটভুক্ত আসামি। কিন্তু তাদের এখনও পর্যন্ত কিন্তু গ্রেপ্তার করা হয়নি।'
এই অর্থ কেলেঙ্কারির মামলার তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের সংশ্লিষ্টতার বিষয়। যেখানে দেখা যায় যখন একটি প্রতিষ্ঠানে দিনে ৭০টি প্রোফাইলে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা লেনদেন করতে পারে সেখানে শুধু এসএসএল নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমের তিন লাখ ১৫ হাজারটি লেনদেন হয়েছে যার পরিমাণ ৯৩৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
নির্দিষ্ট সীমার বাইরে লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলেও এসএসএল থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায় নি। এর মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের বিএনপি আদর্শের বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ আমলে ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানটি।
এসএসএল কমার্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে পারেন।
অন্যদিকে এই ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনদিনেও কোনো উত্তর পাওয়া যায় নি।
বেসিসের সাবেক সভাপতি জানান, ই-কমার্সের ক্ষেত্রে প্রতারণা রোধে আইন তৈরি করতে হবে। দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলেন তিনি তবে গ্রাহকের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
বেসিসের সাবেক সভাপতি আলমাস কবীর বলেন, 'আমি যে ডেলিভারিটা পেয়েছি, সেটা নিয়ে কিন্তু আমি খুশি। আমি অর্ধেক টাকা দিয়ে একটা জিনিস পেয়েছি। কিন্তু বাকি ৫০ টাকা তো আরেকজন পে করেছে। আসলে টাকাটা অন্য কোথাও যায়নি। যারা যারা ডেলিভারি পেয়েছে তাদের কাছে গেছে। টাকাটা আসলে সিস্টেমের মধ্যেই রয়ে গেছে। এই টাকাটা কীভাবে এখন এক্সট্র্যাক্ট করা যাবে, এটা কিন্তু খুব ডিফিকাল্ট এবং খুব ট্রিকি ব্যাপার। আমি মনে করি সরকার এটা নিয়ে কাজ করছেন। রেগুলেটরি বডি এই যে লিমিটগুলো করে এটার তো নিশ্চয় একটা কারণ থাকে। একটা সেফটির বিষয় থাকে। সেজন্যই আমার মনে হয় সরকারকে এটা খুব কঠোর হয়ে কাজটা করতে হবে।'
তবে উচ্চ আদালত থেকে গ্রাহকের অর্থ ফেরতের ব্যাপারে রুল জারি করলে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে সেই সংখ্যা নিয়ে দ্বিধাতে রয়েছেন প্রতারিত গ্রাহকরা।