জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে থেকেই বিএনপি-জামায়াতসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরব ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা ও শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে। গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকার পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর রাজনীতির মাঠে নির্বাচন, রাষ্ট্র সংস্কারের ইস্যুগুলোতে বিভিন্ন দলের নেতাদের বক্তব্যে ধরা পড়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান ও পরস্পরবিরোধী সুর।
রাজনীতির মাঠে পরিস্থিতি যখন এমন; এরমধ্যেই ৫৩তম বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এমন প্রেক্ষাপটে রাজনীতির ময়দানে চর্চা আগামী সংসদে কী ধরনের সরকার গঠন হবে তা নিয়ে? সেই মুহূর্তে আবারো আলোচনায় বিএনপির প্রস্তাবিত জাতীয় সরকার। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও বিএনপির নীতিনির্ধারকের কাছে প্রশ্ন ছিল- কেমন জাতীয় সরকার গঠন করবে তার দল?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিগত সরকারের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলনরত ছিল তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই।’
দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও বিএনপির সাবেক জোট সঙ্গী জামায়াতে ইসলামী বলছে জাতীয় সরকারের ধারণাটি তাদের কাছে অস্পষ্ট। নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনের চেয়ে নির্বাচন পূর্ব ঐক্যেতে জোর দিতে দেখা গেলো জামায়াতের এই নীতিনির্ধারককে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘বিএনপির জাতীয় সরকারের যে প্রস্তাব এটি আমাদের কাছে খুব পরিষ্কার নয়। জাতীয় সরকার গঠনের চেয়ে নির্বাচন পূর্ব ঐক্যেতে থাকা দরকার।’
আর অপেক্ষাকৃত ছোট কিংবা ক্ষমতার রাজনীতিতে কম ভাগীদার দলগুলোর মুখেও শোনা গেলো জাতীয় সরকার নিয়ে অনীহা। ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, নির্বাচন পরবর্তী যেকোনো সরকারই স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে তাই জাতীয় সরকারে না যাওয়ার কথা বলছেন তারা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘একবার সরকারে গেলে অনেকসময় দেখা যায় স্বেচ্ছাচারিতা আসতে পারে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ‘জাতীয় সরকার একটা জটিল প্রক্রিয়া। এই সময় এসে জাতীয় সরকার কীভাবে হতে পারে সেক্ষেত্রে আবারো সকলকে ঐক্যমত্যের ব্যাপার আছে।’
জাতীয় সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান যখন স্পষ্ট তখন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী পরামর্শ, দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সরকার গঠন। পাশাপাশি বিএনপিকে জাতীয় সরকার নিয়ে দলগুলোর সাথে খোলামেলা আলোচনার করার কথাও বলেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপিকে জাতীয় সরকার নিয়ে দলগুলোর সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের অবসানের পর ভোট নিয়ে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে গণমানুষে। রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, যে প্রক্রিয়াতেই সরকার গঠন হোক, রাজনীতিতে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে এনে ভোটমুখী করাই তাদের প্রধান কাজ।