এ যেন কোরিয়ান ড্রামা সিরিজ। উত্তর কোরিয়া যেকোনো সময় হামলা করে বসতে পারে, এমন অজুহাত দিয়ে হঠাৎ দেশে সামরিক আইন জারি করে বসেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। পথে নেমে যায় সেনাবাহিনী। সাধারণ মানুষের সঙ্গে হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।
এরপর জনরোষে সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেন ইওল। তবুও হয়নি শেষ রক্ষা। পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েছে তার অভিশংসন। এখন সাংবিধানিক আদালতের চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষা। ইউন সুক ইওলের নেতৃত্বহীন নতুন এই সকাল বেশ স্বস্তিদায়ক দেশটির সাধারণ মানুষের জন্য। তবে বিরোধীদলের ওপর খুব একটা ভরসা নেই তাদের।
বরাবরই অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইউন সুক ইওল। ৫ বছর মেয়াদের বাকি ছিল আরও আড়াই বছর। এর আগেই চরমভাবে অপমানিত হয়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে তাকে। সাংবিধানিক আদালতের রায়ে যদি চূড়ান্তভাবে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় ইওলকে, এরপর কি হবে দক্ষিণ কোরিয়ার ভবিষ্যৎ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
মার্শাল ল জারিতে নিজ দলের বিরোধিতায় ইমেজ সংকটে পড়েছেন ইওল, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি দেশের অতীতের কোন প্রেসিডেন্টের ইতিহাস খুব একটা ইতিবাচক না থাকায় সেই প্রভাবও পড়েছে দেশের মানুষের ওপর। এক্ষেত্রে আবারও নির্বাচন হলে পিপলস পাওয়ার পার্টি থেকে কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সংবাদ মাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, আপাতত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিলেও দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ মানুষকে নির্বাচিত করতে হবে নতুন প্রেসিডেন্ট। আর এই দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে প্রধান বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জে মিয়াং। তবে ইওলকে সরাতে দেশের মানুষ যেভাবে এক হয়েছেন, নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে সেই একতা থাকবে কিনা, সেই শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি মিয়াং ক্ষমতায় আসেন, নাটকীয় পরিবর্তন আসবে দেশের পররাষ্ট্র নীতিতে। বিরোধীদল সবসময় উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষমতায় এলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়ার ত্রিমুখী সম্পর্কে। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, এরমধ্যে দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় গণতন্ত্রের চর্চা প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
সাংবিধানিক আদালতকে ১৮০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইউন সুক ইওলকে অপসারণ করা হবে নাকি অভিশংসন প্রস্তাব বাতিল করে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করা হবে। এর আগে, দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে ২০১৭ সালে জোর করে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিলো পার্ক গিউন হেইকে। দুর্ভাগ্যবশত সেসময় পার্ক গিউনের প্রসিকিউটর জেনারেল ছিলেন ইউন সুক ইওল।