মাচায় ঝুলছে ছুরি, লইট্যা, পোয়াসহ নানা জাতের মাছ। সূর্যের তাপে যা পরিণত হচ্ছে শুঁটকিতে। এমন চিত্রের দেখা মিলে কক্সবাজারের নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে।
জেলায় শুঁটকি উৎপাদন হয় অর্ধশতাধিক মহালে। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে শুঁটকি উৎপাদনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় মিশে থাকে হাজারও শ্রমিকের শ্রম-ঘাম। আর একেকটি মহালে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেন একেকজন ব্যবসায়ী।
একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'ছুরিমাছ এখন বর্তমানে বাজারে প্রায় ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা চলছে। আর ফাইস্যা যেটা সেটা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা চলছে।'
অন্য একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'অনেকসময় দাম কমে গেলে আমাদের লস হয়ে যায়। আবার অনেক সময় দাম বেড়ে গেল আমরা লাভ করতে পারি। এরকম করেই চলে।'
কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের পছন্দের পণ্য কেনার তালিকায় শীর্ষে থাকে শুঁটকি। তবে রয়েছে শুঁটকির মান নিয়ে প্রশ্ন। যদিও এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের উপরেই শেষ ভরসা রাখার কথা বলছেন পর্যটকরা।
একজন পর্যটক বলেন, 'শুঁটকি মাছ আমরা খুব কম টাকায় এখান থেকে নিতে পারছি। কেউ বলে যে লবণ দেয়া থাকে, মেডিসিন দেয়া থাকে, কেমিক্যাল দেয়া থাকে। আসলে এটা আমাদের ধরার কোনো অপশন নেই।'
এদিকে মহাল ভেদে ইচ্ছেমতো শুঁটকির দাম হাঁকেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে পর্যটক অধ্যুষিত দোকানগুলোতে বাড়ে বহুগুণ। মানভেদে ৬০০ টাকার শুঁটকি বিক্রি হয় ৬৫০ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা মানহীন শুঁটকিও। যদিও এজন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের দুষছেন ব্যবসায়ীরা।
একজন শুঁটকি ব্যবসায়ী বলেন, 'আমরা নিজেরা কাঁচা কিনি। তারপর নিজেরা শুকাই। এটাতে আমার খরচা কম পড়ে সেজন্য আমি দামেও কম রাখতে পারছি।'
জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, জেলার ৭০০ জন ব্যবসায়ী বছরে প্রায় ৪০ হাজার টন শুঁটকি উৎপাদন করেন। এসব শুঁটকি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হয় কোরিয়া, চীন, হংকং, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। তাই শুঁটকির মান নিয়ন্ত্রণে নেয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, 'আমরা একদিকে আইনও প্রয়োগ করবো এবং তাদের বিকল্প টেকনোলজি সহায়তা যদি দিতে পারি তাহলে আমরা মনে হয় খুব অদূর ভবিষ্যতে ১০ ভাগ বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন করতে সক্ষম হবো।'
শুঁটকির মান নিয়ন্ত্রণে উৎপাদনকারীদের মাঝে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ পর্যটকদের।