৪৪ বছর পর সামরিক আইন জারি, গণরোষের মুখে ছয় ঘণ্টার মাথায় প্রত্যাহার। দক্ষিণ কোরিয়া কাঁপিয়ে তোলা এই ঘটনার পেরিয়ে গেছে নয় দিন। তবুও থামেনি রাজনৈতিক অস্থিরতা।
মার্শাল ল' জারির বিষয়ে জাতির উদ্দেশ্য ক্ষমা চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। তবে কয়েকদিন যেতে না যেতেই সুর বদল করলেন বিতর্কিত এই নেতা। প্রেসিডেন্টের দাবি, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করেছে উত্তর কোরিয়া। তাই গণতন্ত্র রক্ষায় জারি করা হয় সামরিক আইন। তদন্ত কিংবা অভিশংসন, যে ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেনো, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করার ঘোষণা ইওলের।
ইউন সুক ইওল বলেন, 'উদার গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে রক্ষায় সামরিক আইন জারি করা হয়েছিল। এটা প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক অধিকার। অপরাধী চক্র সরকারকে পঙ্গু করার চেষ্টা করছে। আমার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেনো, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো।'
ইওলের বক্তব্যের মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে প্রেসিডেন্টকে অপসারণের দাবি তোলে ক্ষমতাসীন দল। পিপিপি প্রধানের দাবি, পদত্যাগের সুযোগ দেয়ার পরেও তা গ্রহণ করেননি ইওল। তাই সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় অপসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনে ভোটাভুটি হলে এবার দলের আইনপ্রণেতারা অংশ নেবে বলেও ঘোষণা দেন পিপিপি প্রধান হান ডং হুন।
তিনি বলেন, 'এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের কোনো ইচ্ছাই নেই। গণতন্ত্র রক্ষায় প্রেসিডেন্টকে অপসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে। নিজেদের বিবেক ব্যবহার করে দলীয় আইনপ্রণেতারা আসন্ন প্রস্তাবে ভোটাভুটিতে অংশ নেবে।'
এর আগে ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতারা অংশ না নেয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে অভিশংসন থেকে বেঁচে যান প্রেসিডেন্ট ইয়ুন। ইওলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে পার্লামেন্টে। যার ভোটগ্রহণ হবে শনিবার।
গণতন্ত্র হত্যার অপচেষ্টার জন্য প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করার বিষয়ে জোরালো হচ্ছে আন্দোলন। নয় দিন পেরিয়ে গেলেও রাজধানী সিওলের অনেক সড়কই বিক্ষোভকারীদের দখলে। গেল বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ৫০ হাজার মানুষ।
স্থানীয় একজন বলেন, 'সবাইকে রাস্তায় নামতে দেখে ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। স্বৈরতন্ত্রের পতনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাবো।'
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের একজন বলেন, 'জনতার কণ্ঠ শুনুন। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। এবারও প্রস্তাব পাস না হলে আবার নামবো। যতক্ষণ ইওলের পতন না হচ্ছে, রাজপথে থাকবো।'
তবে অনেকেই আবার ইউন সুক ইওলের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে ফুল পাঠিয়েছেন। যা রাখা হয়েছে প্রেসিডেন্টের অফিস প্রাঙ্গণে।