মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

আসাদের ‘কসাইখানা’ থেকে মুক্ত হচ্ছেন নির্যাতিত সিরীয়রা

স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের পতনের পর বিদ্রোহীরা সিরিয়ার কারাগারগুলো খুলে দিয়েছেন। এসব কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন বছরের পর বছর ধরে কারাবন্দি থাকা হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে উঠে আসছে আসাদের কসাইখানা হিসেবে পরিচিত সেদনায়া কারাগারসহ বেশ কয়েকটি কারাগারে বন্দিদের নির্মম নির্যাতন আর হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা। ধারণা করা হচ্ছে, এখনও কারাগারের নিচে রয়েছেন অনেক বন্দি। কারাগারগুলোতে জীবিত মানুষ খুঁজছে সিরিয়ার মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

দামেস্কের সরকার পতনের উচ্ছ্বাস কীসের গুঞ্জনে যেন বাঁধা পাচ্ছে। রাজধানীর অদূরে মানুষের কসাইখানা হিসেবে পরিচিত সেদনায়া কারাগারের দেয়ালগুলো যেন বহু বছর ধরে আটকে রাখা, নির্যাতন এমনকি নির্মমভাবে হত্যা করা মানুষের গোঙানির শব্দের প্রতিফলন দিচ্ছে। স্বৈরশাসক আসাদের সেনাবাহিনী এই কারাগারে রেখে কত নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে সেই হিসাব নেই।

কারাগারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পেরেছিল সংবাদমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানের ক্যামেরা। দেখা গেছে, কারাগারের দরজার পেছনে রয়েছে বিশাল জায়গা, গভীরতা হতে পারে পাঁচতলা ভবনের সমান। এখানেই রাখা হয়েছিল আসাদ সরকারের আমলের শেষ কারাবন্দিদের। গুজব উঠেছিল, কুখ্যাত এই কারাগারে এখনও বন্দি রয়েছে এক হাজার ৫০০ সিরীয় নাগরিক।

বিদ্রোহীরা এই কারাগার দখলে নিয়ে দরজা খুলে দেয়ার পর পরিবারের সদস্যরা হন্যে হয়ে খুঁজেছেন নিজের পরিবারের সদস্যকে। তথ্য রয়েছে, রেড উইং খ্যাত লুকানো এই ভূগর্ভস্থ স্থানে না খেয়ে অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ গেছে বহু মানুষের। সিঁড়ি ঘুরে উঠেছে নিচতলা থেকে উপরতলা পর্যন্ত, আশপাশে সব ভল্টের দরজা। বলা হচ্ছে, এই কারাগারে তিনটি উইং ছিল, প্রতিটা উইং ছিল একেকটি টর্চার সেল। বাইরের দুনিয়া থেকে যা পুরোটাই বিচ্ছিন্ন। প্রিয়জনকে খুঁজতে এই কারাগারের আশপাশে ভিড় করছেন আত্মীয়রা।

একজন কারাবন্দির আত্মীয় বলেন, '২০১৪ সালে শেষবারের মতো সিরিয়া এসেছি। তারা বললো আমার ভাই মরে গেছে। ও নাকি সন্ত্রাসী ছিল। এখানে যেন না আসি। অথচ এখানে আমি আমার ভাইকে দেখতে আসতাম।'

প্রতিটা দরজাই এসে শেষ হচ্ছিলো কারাগারের মাঝখানে। সেলগুলো থেকে পাওয়া গেছে ম্যাপ। কম্বল আর কাপড়ে সয়লাব ছিল কারাগারে থাকা বন্দিদের কক্ষগুলো। কেউ কেউ দেয়ালে তৈরি করেছিলেন গর্ত। সেলগুলো কয়েক মিটার প্রশস্ত ছিল। সেখানে একসঙ্গে রাখা হতো কয়েকজন কয়েদিকে। শুয়ে থাকার মতো জায়গাও ছিল না। দেয়াল ভর্তি এখনও কারাবন্দিদের লিখনিতে 'আমাকে নিয়ে যাও'।

একজন বিদ্রোহী বলেন, 'আসাদ বাহিনী আর কারাগারের সেনারা সব তথ্য ইচ্ছা করে শেষ করে দিয়েছে। আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ডিভাইজগুলো অকেজো করে দিয়েছে। ক্যামেরা সরিয়ে ফেলেছে। যেন আমরা তাদের গণহত্যার কোনো প্রমাণ না পাই, কয়েদিদের লুকিয়ে রাখার জায়গাও খুজেঁ না পাই।'

কুখ্যাত এই কারাগারকে এক ধরনের কৃষ্ণগহ্বর বলা হয়, যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৫ সালে ১৩ হাজার মানুষকে শুধু ফাঁসিই দেয়া হয়েছে এখানে। সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্স বলছে, হোয়াইট হেলমেট থেকে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে কারাগারে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সিরিয়ায় শতাধিক কারাগার রয়েছে। পাশাপাশি অনেক গোপন স্থান রয়েছে যেখানে বন্দিদের রেখে নির্যাতন করা হতো। এরমধ্যে কুখ্যাত দু'টি কারাগার হিসেবে পরিচিত সেদনায়া আর তাদমোর। মরুভূমিতে পালমিরা শহরে দামেস্কের বাইরে অবস্থিত এই কারাগারগুলো।

মানবাধিকার বিভিন্ন সংস্থা বলছে, ২০১১ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেড় লাখের বেশি সিরীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করে কারাবন্দি করা হয়েছে। বাশার আল আসাদের বাবা হাফেজ আল আসাদের সময়ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেককেই। বিভিন্ন সংস্থা বলছে, এখনও সিরিয়ার কারাগারগুলোতে বন্দি থাকতে পারে অগণিত সিরীয় নাগরিক।

এসএস