অন্তত আট কোটি আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকা নিয়ে ২০২১ সাল থেকে ধুঁকছে চীনের আবাসন খাত। এর জেরে টালমাটাল অবস্থা দেশটির অর্থনীতিও।
অবশেষে নতুন ফ্ল্যাট ক্রয়ে চীন সরকার ডিড ট্যাক্স তিন শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশে নামিয়ে আনায় মন্দার ধাক্কা কাটিয়ে চাঙা হতে শুরু করেছে চীনের আবাসন ব্যবসা। এছাড়াও ফ্ল্যাট ক্রয়ে ঋণ সুবিধাসহ আরও বেশ কয়েকটি নীতি সহজ করায় গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়ছে। বেইজিং, গুয়াংজু, চেংদুসহ সব জায়গার আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের।
একজন ক্রেতা বলেন, 'আমি দুই বছর ধরে হাউজিং মার্কেট দেখছি। সুদের হার কমে যাওয়ায় চেংদুতে এখনই একটি বাড়ি কেনার উপযুক্ত সময়।'
রিয়েল এস্টেট এজেন্সির পরিষেবা কেন্দ্রের ম্যানেজার গুও জিচেন বলেন, 'নভেম্বরে আমরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০টি চুক্তি সম্পন্ন করেছি। সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যাটি ১৫টির নিচে ছিল।'
পরিসংখ্যান বলছে, নভেম্বরে রাজধানী বেইজিংয়ে সাড়ে ১৮ হাজার বাড়ি বিক্রির চুক্তি হয়েছে। যা অক্টোবর থেকে আট শতাংশ বেশি এবং গত ২০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি নভেম্বরে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের চেংদু শহরে বাড়ি বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি। যা আগের মাসের তুলনায় ৫৭ শতাংশের উপরে। গুয়াংজুতে নতুন বাড়ি বিক্রি বেড়েছে সাড়ে ২৫ শতাংশের বেশি।
গুয়াংজু মিউনিসিপাল হাউজিংয়ের রিয়েল এস্টেট ম্যানেজমেন্ট অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর গান জিয়াপিং বলেন, 'নভেম্বরে গুয়াংজু'র হাউজিং মার্কেটে লেনদেনের সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে সার্বিকভাবে এই খাতে পুনরুদ্ধার প্রবণতা শক্তিশালী হওয়ার পথে এগুচ্ছে। সেপ্টেম্বরের তুলনায় নভেম্বরে নতুন বাড়ি বিক্রি ২৫.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।'
চীন সরকার ঘোষিত গ্রাহক অনুকূল কর ও ক্রয় বিধিনিষেধ শিথিলের কারণেই নতুন-পুরাতন সব আবাসন বাজারেই ইতিবাচক প্রবণতা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফ্ল্যাট ক্রয়ে খরচ কমে যাওয়ায় অনেকেই এখন নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আরও উন্নতমানের আবাসনের খোঁজ করছেন।
চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেটের ডিন ইউ জিয়াওফেন বলেন, 'মূলত কর ইনসেনটিভগুলো বাসিন্দাদের তাদের জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতি করতে উৎসাহিত করছে। আর এর জন্যই যেসব পরিবারগুলোর ঘর আছে, তারাও আবাসন-পরিবর্তনের কথা ভাবছে। ব্যয় কমায় আরও আরামদায়ক এবং উচ্চ মানের আবাসনের সন্ধান করছে।'
চীন সরকার সুদের হার কমানো এবং বাড়িঘর কেনার প্রক্রিয়া সহজ করে এই খাত থেকে চলতি বছর পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে কি না তাই এখন দেখার অপেক্ষা। রিয়েল এস্টেট খাতে চলতি বছরের শেষে শুরু হওয়া এই ইতিবাচক প্রবণতা ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এতে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।