অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার তথাকথিত নিরাপদ অঞ্চল আল-মাওয়াসি অঞ্চল লক্ষ্য করে আবারো বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তাদের হামলায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন। প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থলের ভয়াবহতা তুলে ধরেন। মরদেহগুলো চেনার উপায় ছিল না। ছোট ছোট টুকরো অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শরীরের বিভিন্ন অংশ। ইসরাইলি হামলায় গাজায় প্রাণহানি সাড়ে ৪৪ হাজার ছাড়িয়েছে।
হামাস নির্মূলের নামে গাজা উপত্যকায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আগ্রাসন চালিয়ে আসছে নেতানিয়াহু বাহিনী। হতাহতের পাশাপাশি উদ্বাস্তু হয়েছেন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি। খাদ্য ও ওষুধের সংকটে হাহাকার করছে গাজাবাসী। শুধু তাই নয়, রাফাহ ক্রসিং দখলে নিয়ে ত্রাণ প্রবেশের পথও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইলিরা।
গাজার এমন অবস্থাকে বর্বরতা বলে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ভিডিও ফুটেজ ও স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে ২৯৬ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের পাঁচটির মধ্যে তিনটি ধারা লঙ্ঘন হয়েছর বলেও জানানো হয়।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৩টি অভিযোগের প্রথমটি বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা, দ্বিতীয়টি গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি সাধন, তৃতীয়টি হলো ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত।
ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি। এদিকে ইসরাইল বলছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ধর্মান্ধ সংগঠন। তারা মিথ্যা ও বানোয়াট প্রতিবেদন তৈরি করেছে, যা দুঃখজনক। এর আগে গেল নভেম্বরে গণহত্যার দায়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে ফিলিস্তিনি পর্যবেক্ষক অভিযোগ করেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে নির্মূল করছে। এ সময় তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি ছাড়া গাজার সংকট সমাধানের আর কোনো উপায় নেই।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী পর্যবেক্ষক রিয়াদ মানসুর বলেন, ‘বেত লাহিয়া ও গাজার উত্তরাঞ্চলে প্রকাশ্য দিবালোকে জাতিগত নির্মূলে অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইলিরা। তারা বাস্তুচ্যুত হওয়া পরিবারগুলোর ওপরও হামলা চালাচ্ছে। তাদের হামলা থেকে আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবিরও বাদ যায়নি। বিশ্ববাসীর সামনে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানে তারা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানো হচ্ছে বলেও জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘হত্যা ও নির্যাতন হামাসের হাত ধরেই শুরু হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য যত দ্রুত ও সবচেয়ে কার্যকর উপায়ে চলমান সংঘাতের সমাধান করা। ৭ অক্টোবরের মতো ভয়াবহ ঘটনা যেন আর না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।’
এদিকে, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও হামলা বন্ধ রাখেনি ইসরাইলি বাহিনী। দক্ষিণ লেবাননে আরো তিনটি সামরিক অভিযান চালিয়েছে তারা। এতে বাড়ি ফিরে আসা মানুষও হামলার শিকার হচ্ছে। গাজার পর লেবাননও ইসরাইলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।