কুমিল্লার ময়নামতি রেলওয়ে স্টেশন। ১০ কোটি টাকায় স্টেশনটি নির্মাণ করা হলেও গেল সাত বছরে যাত্রীদের কল্যাণে তেমন কাজে আসেনি।
নজরকাড়া প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও স্টেশনে রয়েছে ভিআইপি গেস্টরুম, হলরুম, সিগন্যালিং রুম ও স্টেশন মাস্টারের কক্ষ। তবে স্টেশনটিতে কোনো ট্রেনের যাত্রাবিরতি না থাকায় ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে পরিত্যক্ত ভবনে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার অংশে বিভিন্ন ডিজাইনের স্টেশন রয়েছে মোট ছয়টি। সেগুলোরও প্রায় একই দশা।
অথচ এক একটি স্টেশনের খরচ দিয়ে নির্মাণ করা যেত জনগুরুত্বপূর্ণ স্বয়ংক্রিয় একশ'টি লেভেল ক্রসিং। কিন্তু এর বিপরীতে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং দিয়ে রেললাইন পারাপারে অসাবধানতাবশত কিংবা চালকের ভুলে প্রতিদিনই ঝরছে প্রাণ। স্থানীয়রা বলছেন, রেলের অপরিকল্পিত উন্নয়নের খেসারত দিচ্ছেন তারা।
কুমিল্লার বিশিষ্ট কলামিস্ট মাসুক আলতাফ চৌধুরী বলেন, 'পরিকল্পনা যখন করা হয়, অগ্রাধিকার যখন সেট করা হয়, সেখানে জনস্বার্থ কতটুকু থাকে? সরকারের কর্তাব্যক্তিরা ইচ্ছা করেন স্টেশন হয়, ইচ্ছা করেন লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত থাকে। আর মানুষ এভাবে মরে। আমার মনে হয় সরকারি টাকা ব্যয় করতে গেলে অবশ্যই পরিকল্পনামাফিক ব্যয় করা দরকার।'
রেলওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, কুমিল্লা অঞ্চলের ২৩৫ কিলোমিটার রেলপথে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা তিন শতাধিক। যার বেশিরভাগই অবৈধ। যেখানে গেল ১৮ মাসেই প্রাণ হারিয়েছেন দেড়শতাধিক মানুষ। সম্প্রতি এমনি এক দুর্ঘটনায় কুমিল্লার বুড়িচংয়ের কালিকাপুরে এক অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ যায় অটোরিকশায় থাকা সাতজনের।
স্থানীয় একজন বলেন, 'বছরে কয়েকটি দুর্ঘটনা এখানে ঘটে। কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্টরা মিলে যদি একটা গেট প্রদান করতেন তাহলে এলাকাবাসী নিরাপদ থাকতো।'
এদিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের সাথে সমন্বয় না করে এলজিইডিসহ সরকারি নানা দপ্তর যত্রতত্র লেভেল ক্রসিং তৈরি করায় ঝুঁকি বাড়ছে। প্রাণহানি এড়াতে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং বৈধ করতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি গেটম্যান নিয়োগে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে আশ্বাস জেলা প্রশাসনের।
পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান বলেন, 'শুধু এলজিইডি না, রোডস অ্যান্ড হাইওয়েসহ সরকারের আরও যেসব বডি আছে, এগুলোর সাথে আলোচনা করে আন্তঃমন্ত্রনালয়ের বৈঠকের মাধ্যমে এটা ঠিক করতে হবে। আমাদের যেসব ব্যস্ত রাস্তা আছে সেগুলোতে লেভেল ক্রসিং দিতে হবে।'
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, 'স্পিড ব্রেকার বাড়ানোর চেষ্টা করবো। স্পিড ব্রেকারের হাইটের বিষয়টা মাথায় রেখেই কাজ করবো। রাস্তা স্লপ করবো এবং অতিসত্বর গেটম্যানসহ এখানে ব্যারিয়ার দেওয়ার জন্য আমরা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রাথমিকভাবে উপদেশ দিয়েছি।'
অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং এবং নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে রেললাইনে বাড়ছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ। আধুনিক রেল ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রয়োজন মানুষের মাঝে সচেতনতা।