করোনা মহামারির ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ন্যাটো ইস্যুতে ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরু করে দেয় রাশিয়া। এই অভিযানের জেরে ইউক্রেনকে রক্ষায় সমানে অস্ত্র উৎপাদন করে সরবরাহ করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অন্যদিকে রাশিয়াকে অস্ত্র দিতে থাকে ইরান। বিশ্বব্যাপী অস্বাভাবিক বেড়ে যায় অস্ত্রের উৎপাদন ও বিক্রি।
এই এক যুদ্ধে সারাবিশ্বে যে পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি হয়েছে তা স্নায়ুযুদ্ধের পর গেলো কয়েক দশকে বিক্রি হয়নি। সেনা অভিযান চলমান থাকায় এই ধারা অব্যাহত থাকে ২০২৩ সালেও। গেলো বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলি অভিযান শুরুর পর অস্ত্র বিক্রি আরও বেড়ে যায়। একদিকে ইসরাইলকে অস্ত্র দেয় যুক্তরাষ্ট্র, অন্যদিকে হামাসকে অস্ত্র দেয় ইরান। তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন টানাপড়েনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অস্ত্র কেনা শুরু করে তাইপেও।
ফলশ্রুতিতে ২০২৩ সালে রেকর্ড ছাড়ায় সারাবিশ্বে অস্ত্রের বিক্রি। বিশ্বের শীর্ষ অস্ত্র নির্মাতা একশ প্রতিষ্ঠানের বিক্রি বেড়ে যায় চার শতাংশ। হঠাৎ যুদ্ধ শুরু হওয়ায় ২০২২ সালে অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এতো অস্ত্র তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছিলো, কিন্তু ২০২৩ সালে এসে সংকট কাটিয়ে উঠে রেকর্ড অস্ত্র উৎপাদন আর বিক্রি করছে তারা। পিছিয়ে নেই ছোট কোম্পানিগুলোও।
সিপ্রি বলছে, বিশ্বের শীর্ষ একশ' অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৪১টি প্রতিষ্ঠানের ঝুলিতে গেছে অর্ধেক লভ্যাংশ। বিক্রি বেড়েছে আড়াই শতাংশ।
বিশ্বের শীর্ষ ২৭ অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ইউরোপে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ব্যবসায় তারা কিছুটা পিছিয়ে। অস্ত্র, আর্টিলারি, এয়ার ডিফেন্স বিক্রি করে আসছে মুনাফা।
এদিকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে চলে যাচ্ছে রাশিয়া। মস্কোর দুই গ্রুপের অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে ৪০ শতাংশ। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান রোস্টেকের অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে ৪৯ শতাংশ।
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলি অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর রেকর্ড এক হাজার ৩৬০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি হয়েছে। বছর ব্যবধানে যা ১৫ শতাংশ বেশি।
এশিয়াতে উত্তর কোরিয়ার হামলা আতঙ্কে দক্ষিণ কোরিয়ার চার অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিক্রি বেড়েছে। ৩৫ শতাংশ বেড়েছে জাপানের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি।
এদিকে তাইওয়ান দখলের পূর্বাভাসে বেড়েছে চীনের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ও বিক্রি। মন্থর অর্থনীতির মধ্যেও অস্ত্র বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার কোটি ডলারের।
২০২৪ সালেও এই দেশগুলোতে অস্ত্র বিক্রি রেকর্ড ছাড়াবে বলে আশঙ্কা সিপ্রির।