‘শিক্ষা জীবন মধুর জীবন, যদি না থাকে এক্সামিনেশন’ গ্রাম-বাংলার কথিত এই প্রবাদ বাস্তবে ধরা দিলো ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের দাবিতে।
আরেকটি ঘটনায় চোখ রাখি। সম্প্রতি ঢাকার রাজপথে সাত দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন ব্যাটারিচালিত যান চালকেরা। সাতের ভেতর এক দাবি, রেশন, পেনশন এবং চিকিৎসা সেবা।
তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের গেল চার মাসে ছোট-বড় অন্তত ৩শ' আন্দোলন হয়েছে সারাদেশে। গোটা দেশ ভাসছে আন্দোলনের জোয়ারে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগেই প্রথম ধাক্কাটা আসে পুলিশ বাহিনীর কর্মবিরতিতে, ৯ই আগস্ট সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দাবিতে অবরোধ। অন্যদিকে প্রধান বিচারপতিসহ সকল স্তরের বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে হাইকোর্ট এলাকা। এবং অবশেষে পদত্যাগ।
এসবের মধ্যেই চাকরি জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে ২৩ আগস্ট মাঠে নামেন আনসার বাহিনীর সদস্যরা। চাকরির ন্যূনতম বয়স সীমা ৩৫সহ কত যে দাবি যার তালিকা দীর্ঘ।
জানা-অজানা দফায় উত্তাল হয়ে ওঠে পোশাক শ্রমিকরা। আন্দোলনের ঝাঁঝ কমেনি নভেম্বরেও। তবে সংঘাত-সংঘর্ষও দেখা গেছে এই মাসে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘাতে জড়ায় প্রতিবেশী দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথেও। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের রেশ না কাটার আগেই হাবিবুর রহমান মোল্লা কলেজের সাথে অন্য দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্ব রূপ নেয় চরমে।
হঠাৎ এত আন্দোলন কেন? গেল ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শক্তিকে দায়ী করলেন গণঅভ্যুত্থানের নেতা হান্নান মাসউদ।
তিনি বলেন, ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে মানুষ একটি স্বপ্ন বুনেছে। তারা ভেবেছে যে, এতদিন যে যৌক্তিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে এখন সুযোগ এসেছে এ সরকারের কাছ থেকে সেগুলো আদায় করে নিতে পারবে।’
সমাজবিজ্ঞানীরাও একই বক্তব্য দিলেও বলছেন, রাজপথে নামা সমাধান নয়।
সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘এ সরকারের যেহেতু তৃণমূলে কোনো দল নেই, যে কারণে তৃণমূলের সমস্যা সেখানেই সমাধান হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সকলে কথা বলতে চাইছে, কেননা সকলের অনেক কথা আছে।’
বিপ্লবের সুবিধা ভাগাভাগির প্রশ্নে অনেকেই আবার ভাগ হয়েছে, তবে আন্দোলনে ভাঙচুরের সাথে দাবি-দাওয়ার সম্পর্ক নাই বলেও অভিমত অপরাধবিজ্ঞানীদের।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘যারা সুবিধা নিতে চায়, যারা পরিস্থিতি অস্থির করতে চায় তারা তো সহিংসতার পথে হাঁটবেই। দাবি-দাওয়াগুলো যারা উপস্থাপন করছেন তারাও যেমন যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করবেন এবং যারা এটা গ্রহণ করবেন, সরকার, কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা মন্ত্রণালয় তারাও বিষয়টিকে একটা যৌক্তিক কাঠামোর মধ্যে এনে সেটাকে সমাধান করার চেষ্টা করবেন।’
আন্দোলনের নেপথ্যে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার আহ্বান সমাজ বিশ্লেষকদের।