আলেপ্পোর কেন্দ্র এটি। সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং আলেপ্পো প্রদেশের রাজধানী, যেটি একদিন আগেও ছিল সিরীয় সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রধান শক্তিশালী ঘাঁটি।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের প্রতীক হিসেবে আলেপ্পোর প্রধান সড়কগুলোতে ক্ষমতাসীন আসাদ পরিবারের সব ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে বিজয় উদ্যাপন করছে বিদ্রোহীরা।
সুন্নি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন তাহরির আল শাম, সংক্ষেপে এইচটিএস নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বিরোধীরা তিন দিনের কম সময়ে আলেপ্পোর পর উত্তর-পশ্চিমের আরেক প্রদেশ ইদলিবও দখল করে ফেলেছে বিদ্রোহীরা।
সেনাবাহিনীর তেমন প্রতিরোধ ছাড়াই দুটি কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখল করে এখন পশ্চিম-মধ্যাঞ্চলের হামা'র দিকে চলছে অভিযান, যেটির অবস্থান সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে মাত্র ২শ' কিলোমিটার। বিদ্রোহের লাগাম টানার আট বছর পর হঠাৎ পরিস্থিতি এমন নাটকীয় মোড় নেয়ায় হতচকিত আসাদ প্রশাসন, বিস্ময় ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।
ইউনিভার্সিটি অব অ্যান্ড্রুজের সিরিয়া বিষয়ক রিসার্চ ফেলো ইব্রাহিম হামিদি বলেন, ‘সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ শহর আলেপ্পো বিদ্রোহীরা দখল করে ফেলেছে। এরপর ৫০ লাখ মানুষের এই বসতিতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া বিদ্রোহীদের আদৌ আর পিছু হঠানো সম্ভব কি না, আমি জানি না।’
২০১১ সাল থেকে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে এইচটিএস এবং প্রতিবেশী তুরস্ত সমর্থিত একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। ১৯৭১ সাল থেকে ক্ষমতাসীন বাথ পার্টির ছায়ায় অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে দেশ শাসনরত আসাদ পরিবার এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অল্প সময়েই রূপ নেয় গৃহযুদ্ধে, যা শেষ হয়নি এক যুগেও। মাঝে ২০১৬ সালে আলেপ্পো থেকে বিদ্রোহীরা পিছু হঠলেও এবার ফিরলো দোর্দণ্ড প্রতাপে।
একাধিক দিক থেকে আলেপ্পো আর ইদলিবকে হঠাৎ ঘিরে ফেলে সরকারি বাহিনীকে কোণঠাসা করে ফেলেছে বিদ্রোহীরা। আকস্মিক আক্রমণে আলেপ্পো থেকে সিরীয় সরকার শুক্রবারই সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়; যদিও উপত্যকার ১শ' কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে চলছে সংঘর্ষ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য, বুধবার থেকে সংঘর্ষে তিন শতাধিক মানুষ নিহত, বেসামরিক প্রাণহানি অন্তত ২০। শক্ত হাতে বিদ্রোহীদের দমন করে এবং তাদের মদতদাতাদের জবাব দিয়ে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করবেন বলে শনিবার বিবৃতি দেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। মিত্র রাশিয়ার সহযোগিতায় বিমান হামলার মাধ্যমে বিদ্রোহীদের দমনের চেষ্টা চালালেও এখন পর্যন্ত মেলেনি সাফল্য।
ইউনিভার্সিটি অব অ্যান্ড্রুজের সিরিয়া বিষয়ক রিসার্চ ফেলো ইব্রাহিম হামিদি বলেন, ‘রাশিয়া যদি শুরুতেই এবং দ্রুত হস্তক্ষেপ করতো, তাহলে অভিযান সফল হতো, কিছু অর্জন হতো বলে আমার ধারণা। রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যস্ত এবং সবচেয়ে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানগুলো সেদিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে হয়তো গত তিন- চারদিনে রাশিয়া সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারেনি।’
প্রশ্ন উঠেছে, মধ্যপ্রাচ্যে আগে থেকেই বহুমুখী সংঘাতের মধ্যে গাজা-লেবাননের পর সিরিয়া ইসরাইলি আগ্রাসনের পরবর্তী লক্ষ্য হয়ে উঠবে কি না। লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে অস্ত্রবিরতি কার্যকরের পরই আসাদ সরকারকে সরাসরি হুঁশিয়ার করেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। বলেন, হিজবুল্লাহ-ইরান নেটওয়ার্কে যোগ দিয়ে আগুন নিয়ে খেলছেন সিরীয় সেনাবাহিনী ও সরকার এবং উত্তরাঞ্চলে বিদ্রোহীদের উত্থানে হুমকিতে পড়বে দামেস্ক। মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর এমন বিবৃতির পরদিনই আলেপ্পো-ইদলিব ঘিরে নতুন মাত্রায় পৌঁছায় সংঘাত।
এদিকে আগ্রাসনের দু'মাস পর অস্ত্রবিরতি কার্যকরে লেবাননে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন বাস্তুচ্যুত লাখো মানুষ। যদিও অস্ত্রবিরতির মধ্যেই থেমে থেমে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।
লেবাননে অস্ত্রবিরতি কার্যকর এবং অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অস্ত্রবিরতির আলোচনার জন্য শাসকদল হামাসের প্রতিনিধি দলের মিশরে যাওয়ার খবরে আশায় বুক বাঁধছেন ফিলিস্তিনিরাও। এক বছরের বেশি সময়ের ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় এবং দুই মাসে লেবাননে প্রাণ গেছে প্রায় অর্ধলাখ মানুষের।