কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে বুড়িগঙ্গার পাড় যেন এক মায়াবী চিত্রকর্ম হয়ে যায়। শীতের শিশিরে ভেজা পথঘাট, প্রকৃতি যেন আরো কিছুক্ষণ ঘুমোতে চায়। শহরের আকাশজুড়ে কুয়াশার ধূসর চাদর, আর গাছে গাছে শিশিরবিন্দু।
হেমন্তের শীতের এই আগমনি বার্তায় চায়ের দোকানে ধোঁয়া ওঠা কাপে শুরু হয় ঢাকার ব্যস্ত দিন। বন্ধুদের আড্ডায় যোগ হয় শীতের গল্প।
শহরের ভোরে জমে থাকা শিশিরের মতোই ধীরে ধীরে শীতের অস্তিত্ব বাড়ছে। লেপ-তোষকের দোকানগুলো এখন শিল্পীর ক্যানভাস। ভেতরে তুলোর স্তর বসিয়ে কারিগররা শীতকে বন্দি করে রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লেপের প্রতিটা সেলাইরে ফোর যেন উষ্ণতার গল্প বলে।
একজন লেপের কারিগর বলেন, 'এটা হচ্ছে সিজনাল ব্যবসা। শীতে বেশি হয় আর গরমের মধ্যে কম হয়। আগে লেপটা বেশি চলতো। এখন কম্বল কমফোর্ট আসাতে লেপটা কম চলে।'
শীতবস্ত্রের দোকানে কেবল কাপড় নয়, জমা থাকে মানুষের শীতের স্বপ্ন। নতুন জ্যাকেট আর রঙিন মাফলারে শহরের মানুষ শীতকে আলিঙ্গনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
একজন ক্রেতা বলেন, 'হালকা শীত পড়ছে। তো সেজন্য হালকা পোশাকই কিনছি। যখন শীতটা বেশি পড়বে তখন একটু ভারি পোশাক নেয়া যাবে।'
শীতের সাথে শহরের প্রিয় খাবারগুলোর সম্পর্ক অনেকটা কবিতার মতো যার প্রতিটা স্তবকেই খাদ্যের স্বাদ । রাজধানীর রাস্তার ধারে চিতই, পাটিসাপটা আর ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠার গন্ধ যেন শীতের রূপ আও বাড়িয়ে দেয়।
পিঠা খেতে আসা একজন বলেন, 'গ্রামে যেটা অ্যাভেইলেবল পাওয়া যায় ঢাকা শহরে কিন্তু সব জায়গায় পাওয়া যায় না। শীতের সময়ই শুধু পাওয়া যায়।'
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে, এ বছর ঢাকায় শীতের তীব্রতা তুলনামূলক মৃদু হলেও কোল্ড ওয়েভের কারণে বেশি শীত অনুভিত হতে পারে । ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় সবচেয়ে ঠান্ডা থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস.এম কামরুল হাসান বলেন, 'কোল্ড ওয়েভের ব্যাপারটা আসলে মানুষের অনুভূতি বিবেচনা করলে কিন্তু এবার ঠান্ডার অনুভূতিটা অনেক বাড়বে। এবার আশঙ্কা করছি যে জানুয়ারি মাসে কুয়াশার পরিমাণটা বাড়তে পারে।'
আগমনি শীতের ঠান্ডা শহুরে জীবনে আনে এক নস্টালজিক অনুভূতি। পুরনো শাল, কিংবা নতুন সোয়েটার, সকালের সোনা রোদে ব্যাডমিন্টন খেলা আর সন্ধ্যায় গানের আড্ডা শহরের ছন্দকে নতুন রূপ দেয়। তাইতো শীত কেবল একটি ঋতু নয়, জীবনের হাজারও স্মৃতিমাখা গল্পের একটি অনন্য অধ্যায়।