একরকম বন্দুক তাক করেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরাইলি সেনাদের সরে যাওয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। তবে দুই পক্ষের অভিযোগ, বুধবার ভোরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এরপর চুক্তি ভঙ্গ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর রকেটের গুদামে হামলার দাবি করেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বলেছেন, হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করলে সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধে নেমে যেতে হবে।
এদিকে, যুদ্ধবিরতিতে হামলার মধ্যেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ফিরছেন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ কয়েক মাস পর নিজ শহর, নিজ বাড়িতে ফিরলেও সেখানে থেকে যেতে পারছেন না তারা। একদিকে দুই পক্ষের সংঘাত আবারও শুরুর আতঙ্ক, অন্যদিকে, ঘরবাড়ি সব ধ্বংসস্তূপের নিচে। এই অঞ্চলের অধিবাসীদের ওপর আবারও কারফিউ জারি করেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। সীমান্ত শহরগুলোতে ট্যাংক নিয়ে টহল দিচ্ছে আইডিএফ।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, বৃহস্পতিবার হিজবুল্লাহর মধ্যমপাল্লার রকেটের গুদামে হামলা করেছে তারা। তবে এই হামলা করা হয়েছে লিতানি নদীর ওপরে, যেই স্থান যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় পড়ে না। তারা জানান, দক্ষিণাঞ্চলে অনেক যানবাহন প্রবেশ করতে দেখা যায়, সেখান থেকে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। তবে হিজবুল্লাহ বলছে, ইসরাইল সীমান্তের গ্রামগুলোতে হামলা করছে। এদিকে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই লেবাননের বৈরুতে স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন।
লেবাননে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজায় বেড়ে গেছে ইসরাইলি আগ্রাসন। উত্তরে গাজা শহর, নুসেইরাত শরণার্থী শিবির, মধ্য গাজার দেইর আল বালাহতে হামলা বাড়িয়েছে আইডিএফ। লেবাননে থেমে গেলেও গাজায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে হতাহত। নুসেইরাত ক্যাম্পে ভয়াবহ হামলায় কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে। গাজার ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরগুলো একটি এই ক্যাম্প। এখানেই বোমা হামলা করে ভবন আর মসজিদ গুড়িয়ে দিয়েছে আইডিএফ।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র আর জাতিসংঘের চাপের পর গাজার দক্ষিণাঞ্চলের কেরেম শালমে ক্রসিং দিয়ে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করছে ত্রাণবাহী গাড়ি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার শত শত ট্রাক প্রবেশ করছে উপত্যকায়। এখন পর্যন্ত গাজায় ১০ লাখ টন ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে ইসরাইল। তবে গাজা কর্তৃপক্ষ বলছে, এখনও অপেক্ষমাণ শত শত ট্রাক। যদিও জাতিসংঘ বলছে, চলমান আগ্রাসনে উত্তর গাজায় খাদ্যের মজুত নেই বললেই চলে। প্রবেশ করতে পারছে না ত্রাণ সহায়তা।
তবে হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে বৃষ্টিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন গাজা উপত্যকায় তাবুতে থাকার সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। দক্ষিণের খান ইউনিসে সমুদ্র সৈকতের কাছে তাবুর তৈরি ঘরই পানির কারণে হারাতে বসেছেন আশ্রয় নেয়া সাধারণ মানুষ। ৫ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এত এত আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা সহযোগিতা করেও কোনোভাবেই গাজাবাসীকে পুরোপুরি ভোগান্তি মুক্ত করতে পারছে না। এমন অবস্থায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি চাইলেও হামাস নির্মূলের আগে সেটি করবেন না।