ভারতের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের যুব সংগঠনের সদস্য ও সমর্থকরা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে চলে ব্যাপক ধরপাকড়।
ভারত কংগ্রেসের যুব সংগঠনের প্রেসিডেন্ট উদয় ভানু চিব বলেন, 'আজকের এই বিক্ষোভ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গৌতম আদানি। সারা বিশ্বের সামনে ভারতকে বিব্রত করেছেন তিনি।'
জ্বালানি প্রকল্পে দুর্নীতির অংশ হিসেবে ভারত সরকারের কর্মকর্তাদের ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঘুষ দানে সম্মত হওয়ায় আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি ও তার সাত সহযোগীর বিরুদ্ধে গেল সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে অভিযোগ গঠন করে মার্কিন প্রশাসন। জারি করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও। ভারতীয় এ ধনকুবেরের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের ঘুষের অভিযোগ নিয়ে সোমবার (২৫ নভেম্বর) দেশের নীতিনির্ধারকদের আলোচনা গড়ায় হট্টগোলে। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় শেষমেশ অধিবেশন স্থগিত করতেই বাধ্য হন চেয়ারম্যান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদ্বীপ ঢাংকার।
ভারত কংগ্রেসের নেতা প্রমোদ তিওয়ারি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির বিচার বিভাগ আদালতে জানিয়েছেন যে এখানকার এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, ভারতের সরকারকেও নিয়ন্ত্রণ করছেন। খবরে এমনই বলা হয়েছে। এই ব্যক্তিটি আদানি সাহেব।'
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য বরাবরই বিরোধী দলগুলোর আক্রমণের লক্ষ্য শিল্পপতি গৌতম আদানি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অভিযোগ গঠনে আদানি ইস্যুতে নতুন করে উত্তপ্ত ভারতের রাজনীতি। বিরোধীদের অভিযোগ, করদাতাদের কষ্টার্জিত হাজার হাজার কোটি রুপি ঘুষ দিতে খরচ করেছেন আদানি।
ভারত কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, 'কেন আজ পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে, তা আমার জানা নেই। ২৬৭তম ধারায় আদানি ইস্যু তোলা হয়েছিল আলোচনার জন্য। আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ দানসহ নানা আর্থিক অনিয়মের গুরুতর সব অভিযোগ রয়েছে। করদাতাদের দেয়া প্রায় দুই হাজার ৩০ কোটি কোটি রুপি ঘুষের পেছনে খরচ করেছেন তিনি, যা রাজ্যসভা চেয়ারম্যানকে জানানোর চেষ্টা করছিলাম আমরা।'
এদিকে ঘুষ দেয়ার অভিযোগে নাম জড়ানোয় দেশে দেশে অনিশ্চয়তায় আদানি গ্রুপের বিভিন্ন প্রকল্পে শত-কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ। আদানি সংশ্লিষ্ট সকল বিনিয়োগ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্সভিত্তিক বহুজাতিক তেল জায়ান্ট টোটাল এনার্জিস।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ সৌর শক্তি প্রকল্পে নাম লেখানোর পর ২০২১ সালে আদানি গ্রিন এনার্জির প্রায় ২০ শতাংশ মালিকানা কিনে নেয় টোটাল এনার্জিস। আদানি টোটাল গ্যাস লিমিটেডের ৩৭ শতাংশের বেশি এবং গ্রিন এনার্জির তিনটি নবায়নযোগ্য যৌথ প্রকল্পেও ৫০ শতাংশ মালিকানা টোটালের। আদানির দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর গেলো কয়েকদিনে আদানি গ্রুপের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে দর হারিয়েছে টোটাল এনার্জিসও।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎসহ আদানির সঙ্গে বিভিন্ন জ্বালানি প্রকল্প বহাল রাখবে কি না, সে সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার ওপর ছেড়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত সরকার। দেশটির এসব প্রকল্পে আদানির প্রভাব খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্রও। শ্রীলঙ্কার মান্নার ও পুনারাইনে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করছে আদানি গ্রুপ।
যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষের অভিযোগ গঠনের পরপরই আদানি গ্রুপের সঙ্গে দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণ ও যাত্রী টার্মিনাল সংস্কারে প্রস্তাবিত ৩০ বছর মেয়াদি ৭৪ কোটি ডলারের চুক্তি বাতিল করে কেনিয়া সরকার। অস্ট্রেলিয়ায় আদানি গ্রুপের কয়লা বিভাগের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দায়ের করেছে আদিবাসীরা। বাংলাদেশেও অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে আদানি গ্রুপের সঙ্গে জ্বালানি চুক্তি খতিয়ে দেখছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি জাতীয় পুনঃমূল্যায়ন কমিটি।
এদিকে ঘুষ কেলেঙ্কারির জেরে পুঁজিবাজারে ২৮ শতাংশ পতনের পর বছরের সর্বনিম্ন দর দেখেছে আদানি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের ২২তম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় সাত হাজার কোটি ডলার।