আজকাল হাঁটু ব্যথা খুব কমন একটি সমস্যা। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে হাঁটু ফুলে যাওয়া বা বেঁকে যাওয়াও দেখা যায়। যাকে চিকিৎসার ভাষায় ‘জেনু’ বলা হয়। কিছুক্ষেত্রে হাঁটুতে এমন জেনু ভেরাস বা জেনু ডিফর্মিটি দেখা দিতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে হাঁটু ব্যথা থেকে কোমর ব্যথাও দেখা দিতে পারে।
হাঁটুর গঠন হয়েছে মূলত তিনটি অংশ মিলে। ওপরেরটি হচ্ছে ফিমার, নিচেরটি টিবিয়া এবং সামনের অংশের নাম প্যাটেলা। হাঁটুর ভেতরের পানিকে বলা হয় সাইনোভিয়াল ফ্লুইড।
গঠনগত দিক থেকে হাটুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বাইন্ডিং লিগামেন্ট এবং মেনিস্কাস। তাই সব সময় হাঁটু ব্যথা যে শুধু হাঁটু ক্ষয়ের কারণে হয় এ ধারণা পুরোপুরি সঠিক না। ক্ষেত্রে বিশেষে মেনিস্কাস ও লিগামেন্ট আঘাত থেকেও হাঁটুর ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া বিভিন্ন হাড়ের যক্ষ্মা বা বোন টিবি থেকেও কিন্তু হাঁটু ব্যথা হয়। এর পাশাপাশি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস, জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস (জেআইএ), সেরো পজিটিভ আর্থ্রাইটিস, সেরো নেগিটিভ আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন আর্থ্রাইটিস রোগের কারণেও হাটুর ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় হাঁটু ব্যথার সঙ্গে হাঁটু ফুলে যাওয়া ও ব্যথার জায়গা গরম হয়ে যাওয়া দেখা যায়।
কিছু রোগীর ক্ষেত্রে হাটুর ব্যথা মাত্রাতিরিক্ত ওজনের জন্য হয়ে থাকে। কারো শারীরিক উচ্চতার সঙ্গে যদি ওজন সামঞ্জস্যতাপূর্ণ না হয় সেক্ষেত্রে হাটুর ব্যথা হতে পারে। এর সঙ্গে খেলাধুলা থেকে পাওয়া আঘাত থেকেও হাঁটু ব্যথা হতে পারে।
ইউরিক এসিড থেকেও অনেক সময় হাঁটু ব্যথা তৈরি হয়। বিশেষ করে আমাদের দেশ থেকে যারা কাজের জন্য মধ্যপ্রাচ্য থাকেন তাদের মধ্যে এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। কিছুক্ষেত্রে ভিটামিন ও মিনারেল স্বল্পতাও হাঁটু ব্যথার কারণ হয়ে থাকে। যেমন ভিটামিন ডি, গ্লুকোসামিন কনড্রয়টিন সালফেট এবং ক্যালসিয়াম স্বল্পতায় হাঁটু ব্যথা হয়।
হাঁটু ব্যথা যে কারণেই হোক না কেন, রোগী যদি ব্যথার শুরুতেই চিকিৎসা শুরু করেন তাহলে অধিকাংশ সময় অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। তবে হাঁটু ব্যথার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষ কিছু ভুল করে থাকে। যেমন ব্যথা হলেই চেয়ারে বসে নামাজ পড়া, হাঁটা চলা কমিয়ে দেয়া, সিঁড়ি উঠা নামা না করা ইত্যাদি। এগুলো আসলে ভ্রান্ত ধারণা।
হাঁটু ব্যথা হলে রোগীকে কিছু দিন বিশ্রাম নিতে হবে। আর হাঁটু যদি ফুলে যায় তখন ঠান্ডা সেক বেশ উপকারী। এর সঙ্গে বিভিন্ন এক্সারসাইজ আছে যেগুলো ভালো কাজ করে। এদিকে অ্যাডভান্স রিহ্যাব চিকিৎসা হাঁটু ব্যথার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী, এতে অপারেশনের জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
পাশাপাশি বিভিন্ন এক্সারসাইজ এবং বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট যেমন গ্লুকোসামিন, হাইলোরনিক এসিড, ভিটামিন-ডি এর মতো সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত নিতে হয়। আর যাদের ওজন বেশি তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনলে ব্যথা অনেকাংশে কমে আসে। তবে হাঁটুর ব্যথার জন্য জুতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেজন্য অবশ্যই নরম জুতা ব্যবহার করতে হবে। এগুলোর পাশাপাশি নিয়মিত এক্সারসাইজ চালিয়ে গেলে হাঁটু ব্যথার পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।