ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভয়াবহতা বোঝাতে পশ্চিমা গণমাধ্যম এটিকে আখ্যা দেয় 'অ্যা সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম উইথ কোর অব হারিকেন উইন্ডস' হিসেবে। আঘাতের তীব্রতায় সেদিন মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় প্রান্তিক এই জনপদ।
বরগুনায় সিডরের প্রভাবে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় নিম্নাঞ্চল। ব্যাপক ক্ষতি হয় জানমালের। উপকূল জুড়ে সিডরের ক্ষয়-ক্ষতির সেই চিত্র আজও ভোলেনি উপকূলীয় বাসিন্দারা।
সিডরে মেয়েকে হারানো এক বাবা বলেন, 'ছয় মাস তো কেঁদে কেঁদেই দিন পার করছি। আমার ছোট মেয়ে সিডরে পানিতে হারিয়ে গেছে। যেখানেই খোঁজ পেয়েছি সেখানেই দৌড়ে গেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি।'
সিপিপি'র উপজেলা টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, '১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে দেখালাম আমাদের কোমর সমান পানি আমাদের সিপিপি অফিসে। অর্থাৎ একটা সুপার সাইক্লোন ২২০ কিলোমিটারের ওপরে প্রতি ঘণ্টায় তীব্রতা ছিল।'
পাঁচ ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানার পর স্থানীয়দের সহায়তায় এগিয়ে আসে বিভিন্ন দাতা সংস্থা। তবে সেই সহায়তা একেবারেই নামমাত্র।
স্থানীয় একজন বলেন, 'শতশত কোটি টাকা বরাদ্দ আমরা শুনছি। কিন্তু বাস্তবে জনগণের কাছে সেটা পৌঁছেনি। শুধু ছবি তোলাই ছিল তাদের এনজিওর ধরন।'
বরগুনা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় তো দূরের কথা। জোয়ারের পানিতে টেকার মতো বেরিবাঁধও করা হচ্ছে না। এখানে যেটা বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ নেই, বরাদ্দ কম। আসলে যে বরাদ্দ দেয়া হয় সেটাও পুরোপুরি খরচ করা হয় না। সেখানে দুর্নীতি হয়েছে।'
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বরগুনায় এখনও নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার। পাশাপাশি জেলায় ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামতে রয়েছে ধীরগতি। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. সামসুজ্জোহা বলেন, 'যেসকল উপকূলীয় বাঁধ আছে সে বাঁধগুলো বর্তমানে যে অবস্থায় আছে সেগুলো পুনঃনিরীক্ষার মাধ্যমে আমরা বিল্ট ব্যাগ বেটার কনসেপ্টের মাধ্যমে পুনর্গঠন ও সংস্কার করতে পারি। যেখানে বাঁধ নেই সেখানে বাঁধ যথাযথ হয়েছে কি না, টেকসই হয়েছে কি না। সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা আলোকপাত করতে পারি।'
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, 'সিআইপি প্রকল্প বিদেশি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়েছে। এবং এর পরে সিআইপি-২ প্রকল্প প্রস্তাবিত আছে। আসলে এগুলো বাস্তবায়িত হলে একটা স্থায়ী সমাধান হবে। আমাদের ৮০৫ কিলোমিটার বেরিবাঁধ, এটাকে পুরোপুরি স্থায়ী রূপ দিতে সময় লাগবে।'
ঘূর্ণিঝড় সিডর বরগুনার উপকূলবাসীর কাছে এক বিভীষিকার নাম। সরকারি হিসেবে এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় এক হাজার ৩৪৫ জন। বেসরকারি হিসেবে যা আরও কয়েকগুণ।